ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগে প্লেন ভাড়াসহ সিংহভাগ খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ও বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তাই বহন করবেন। এসব খরচের মধ্যে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োগ ও কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এছাড়া নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইন্স্যুরেন্স, করোনা পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বা প্রতিষ্ঠান বহন করবেন। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসাও নিশ্চিত করবেন।
চুক্তির বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে কর্মীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় আছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে কম্বোডিয়া ও নেপালের যেমন চুক্তি হয়েছিল সেটার আদলেই এ স্মারক তৈরি করা। শুধু বয়সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৪৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়া সরকারের প্রাইভেট রিক্রুটিং অ্যাক্ট ১৯৮১ অনুযায়ী নিবন্ধিত এবং সে দেশের সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তির মেয়াদ হবে পাঁচ বছরের জন্য। মেয়াদ শেষে দুই পক্ষের সম্মতিতে মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।
সূত্রটি জানায়, কর্মীর সঙ্গে চুক্তিতে তার বেতন উল্লেখ থাকতে হবে। চুক্তির মেয়াদ কতদিন সেটাও উল্লেখ থাকবে। কর্মীকে তার বেতন মাসের সাত তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এবং তা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিতে হবে। সাধারণ কর্মঘণ্টা হবে ৮ ঘণ্টা। অতিরিক্ত সময়ের জন্য ওভারটাইম দিতে হবে। সপ্তাহে একদিন ছুটি ভোগ করতে পারবেন কর্মী। এ ছাড়া কর্মীর ভিজিট পাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস আগেই নিয়োগকর্তাকে নবায়ন করতে হবে। তা না করতে পারলে জরিমানা নিয়োগকর্তাকেই বহন করতে হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথমবার কর্মীর সেদেশে প্রবেশের জন্য বিমান ভাড়া নিয়োগকর্তা বহন করবেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালয়েশিয়া থেকে ফেরত যাওয়ার জন্য যাবতীয় খরচও নিয়োগকর্তা বহন করবেন। তবে দুর্ঘটনাজনিত কারণসহ চার কারণ ছাড়া দেশে ফেরত যেতে চাইলে খরচ কর্মীকে বহন করতে হবে। আবার যদি কর্মী কোনও অবৈধ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে কর্মীর খরচেই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
সূত্রটি জানায়, কর্মীর পাসপোর্ট নিয়োগকর্তা নিজের হেফাজতে রাখতে পারবেন না। চুক্তি অনুযায়ী সিকিউরিটি ডিপোজিট, প্রসেসিং ফি, ভিজিট পাস, ইন্স্যুরেন্স, মালয়েশিয়ায় মেডিক্যাল চেকআপ ফি, ইমিগ্রেশন সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স, বায়োমেডিক্যাল, ভিসা প্রসেসিং, ভিসা, উড়োজাহাজের টিকিট, বাংলাদেশ হাইকমিশনের সত্যায়িতকরণ, মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ এবং করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়োগকর্তা করবেন। তবে বাংলাদেশে যদি কোনও রিক্রুটমেন্ট খরচ থাকে সেটা কর্মীকে বহন করতে হবে।
যদি কোনও কর্মীর আর্থিক সুবিধার প্রয়োজন হয়, তবে তিনি নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ঋণ নিতে পারবেন এবং নিয়োগকর্তা কর্মীর মাসিক বেতন থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ হারে কেটে নিতে পারবেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, ‘মালয়েশিয়ার বাজার নিয়ে অতীতে অনেক কিছু হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। সফল হবো কিনা সেটা নির্ভর করবে সমঝোতা স্বাক্ষরের পর।’
মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানিয়েছিলেন, শুধু মালয়েশিয়া নয়, অদূর ভবিষ্যতে সব কর্মী ডাটাব্যাংক থেকে যাবে। মালয়েশিয়া দিয়ে সেটা শুরু হবে বলে আশা করছি।