পেগাসাস কেলেঙ্কারির পরে নরেচরে বসেছে সমগ্র বিশ্ব। অনেকেই বলছেন তথ্য-প্রযুক্তির এই অবাধ উন্নয়ন এখন আর কেবল ইতিবাচক নয়। দেখা দিয়েছে একটি নেতিবাচক আতঙ্ক হয়ে। বিশ্বের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক সেলিব্রেটিদের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাচ্ছে তৃতীয় পক্ষের কাছে। নিজের অজান্তেই ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড, কথোপকথন, ছবি, ভিডিও এবং ফোনালাপের তথ্য চলে যাচ্ছে অন্য কারো হাতে। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন কিংবা উপায়ও বা কি এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার?
আড়িপাতা সফটওয়্যারটি কতটুকু আপনার তথ্য হাতিয়ে নিতে পারছে তা নির্ভর করে দুটি জিনিসের উপরে।একটি হচ্ছে সফটওয়্যারটির কার্যক্ষমতা আর অন্যটি হচ্ছে আপনি কতটুকু সতর্ক এ বিষয়ে। সফটওয়্যারের কার্যক্ষমতার উপরে যদিওবা হাত নেই কিন্তু নিজেকে সতর্ক রাখার সবটুকু চেষ্টা করতে ত্রুটি রাখা উচিত নয়।
ব্যক্তিগত সতর্কতার মাধ্যমেই আড়িপাতা এবং নজরদারি থেকে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।কিভাবে বুঝবেন কেউ আপনার ফোনে আড়িপাতছে কিংবা নজরদারি করছে আপনার উপরে?
১। প্রথমেই যে সমস্যাটির মুখোমুখি হবেন তা হচ্ছে মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ নিয়ে। কেউ আপনার মোবাইলের উপরে নজরদারি করলে অতি দ্রুত কিংবা অন্য সময়ের থেকে দ্রুততর সময়ে মোবাইলের চার্জ শেষ হবে। এখানেই শেষ নয়। মোবাইল চালানোর সময় অনুভব করবেন আপনার মোবাইল অন্য সময়ের তুলনায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি গরম হচ্ছে।
২। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এমন অ্যাপের অস্তিত্ব টের পাবেন যা কিনা আপনি ইন্সটল করেন নি কিংবা আগে আপনার মোবাইলে ছিলো তাও আপনার নজরে আসেনি।
৩। আপনি যদি আপনার ডাটা ইউজ অর্থাৎ কতটুকু ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তা অবগত থাকেন, তাহলে দেখবেন অন্য সময়ের থেকে বেশি ডাটা ইউজ হচ্ছে। ডাটা ইউজের এই হিসাবটি আপনি মিলাতে পারবেন না।
৪। হঠাৎ করেই আপনার মোবাইল ফোনটি অদ্ভূতুরে আচরণ করতে পারে। নিজ থেকে অন্য অ্যাপে চলে যাওয়া কিংবা আপনি একটি অ্যাপ চালাচ্ছেন সেটা বন্ধ হয়ে নিজের মতো অপশনে ঢুকে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে যদি আপনার ফোন নজরদারিতে থাকে।
৫। আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরি ঘেটে আপনি এমন কিছু ওয়েবসাইট ব্রাউজিংয়ের ইতিহাস পেতে পারেন যা কিনা আপনি ব্রাউজ করেন নি। এমন অবস্থায় বুঝে নিতে হবে আপনার অজান্তেই অন্য কেউ আপনার মোবাইলটি ব্যবহার করছে।
৬। মোবাইলে কথা বলার সময় অদ্ভূত কারো উপস্থিতি, শব্দ, যান্ত্রিক আওয়াজ পেতে পারেন যা কিনা আপনার সঙ্গীর থেকে আসছে না। এমন অবস্থায় বুঝতে হবে তৃতীয় পক্ষের কেউ আপনার কথোপকথনটি শুনছে কিংবা আপনার কল রেকর্ড হচ্ছে।মনে রাখতে হবে তৃতীয় পক্ষের কেউ আপনার মোবাইলের উপর নজরদারি করলে সে কিছু না কিছু চিহ্ন ফেলে যাবে এবং সেটা ধরেই আপনাকে যথাসম্ভব সাবধান হতে হবে।
কিভাবে সাবধান হবেন?
১। আপনি যদি শতভাগ নিশ্চিত হোন যে কেউ আপনার উপর নজরদারি করছে, তাহলে আপনার মোবাইলটি ফ্যাক্টরি রিসেট দিতে পারেন। এতে করে মোবাইলে থাকা স্পাই অ্যাপটি ডিলিট হয়ে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে ফ্যাক্টরি রিসেট দিলে স্পাই অ্যাপের সাথে আপনার অন্য সকল ডাটাও মুছে যাবে।
২। আপনার ডিভাইসটির সফটওয়্যারগুলো নিয়মিত আপডেট দিয়ে রাখুন। আনআপডেটেড অ্যাপের উপর নজরদারি করা তুলনামূলক সহজ বলে গণ্য করা হয়।
৩। অ্যাপ লিস্টে গিয়ে অপরিচিত এবং অপ্রয়োজনীয় কোন অ্যাপ দেখতে পেলে সেটি সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করে দিন।৪। শক্তিশালী কোন এন্টি-ভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করুন। ধারণা করা হয় এন্টি-ভাইরাস অ্যাপ মোবাইলে স্পাই অ্যাপের উপস্থিতি জানিয়ে দিতে সক্ষম।
৫। আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টকে শক্তিশালী করুন। একান্ত ব্যক্তিগত কাজ করার সময় মোবাইল ক্যামেরা কিংবা ওয়েব ক্যাম প্রয়োজন না হলে কিছু একটা দিয়ে ঢেকে রাখুন।আপনি স্পাই অ্যাপ নিয়ে সাবধান হলে অনেকাংশেই ঝুঁকি কমিয়ে আনা সক্ষম বলে মনে করে টেক বিশেষজ্ঞরা।