ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়, ডিজেল চালিত বাস না হয়েও নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায়, নির্ধারিত গন্তব্যের বাসে ভাড়ার চার্ট না থাকাসহ বেশকিছু অনিয়মের বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ।
বিআরটিএ’র সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গাড়ির রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক রয়েছে কিনা তাও দেখা হচ্ছে। সিএনজিচালিত, ডিজেলচালিত কিংবা পেট্রোলচালিত বাস চিহ্নিত করে স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে যেকোনও যাত্রী বাসে ওঠার আগে দেখতে পাচ্ছেন বাসটি ডিজেলচালিত নাকি সিএনজিচালিত।
এছাড়া যেকোনও নাগরিক কিংবা যাত্রী বিআরটিএ-তে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারছেন।
বিআরটিএ’র পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. সারওয়ার আলম বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বলেন, ‘অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যাচ্ছে, অনেক বাসে চার্ট নেই। চার্ট না থাকলে সেটার বিষয়ে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে আমরা বেশি নজর দিচ্ছি নতুন ভাড়া নির্ধারণের ওপর। কোনও বাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। সিএনজিচালিত কিংবা পেট্রোলচালিত বাস হয়েও ডিজেলচালিত বাসের বর্ধিত ভাড়া নিচ্ছে কিনা, বাসের ভেতর বিআরটিএ থেকে দেওয়া নির্ধারিত গন্তব্যের চার্ট দৃশ্যমান রয়েছে কিনা, তা তদারকি করা হচ্ছে।’
সারওয়ার আলম বলেন, ‘ওয়ে বিলের নামে অতিরিক্ত ভাড়া, গেটলক কিংবা সিটিং সার্ভিসের নামে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়ের একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার লাগাম টানতে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সঙ্গে জড়িত বাস কোম্পানিগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ডিজেলচালিত গাড়ির। পেট্রোলচালিত কিংবা সিএনজিচালিত কোনও বাসের ভাড়া বাড়েনি। যেসব সিএনজিচালিত কিংবা পেট্রোলচালিত বাস নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া সড়ক পরিবহন আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মনিটরিং চলছে। বিআরটিএ কর্মকর্তা হিসেবে অন্যান্য কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট ও আমি মাঠে রয়েছি।’
বাসটি ডিজেলচালিত, সিএনজিচালিত নাকি পেট্রোলচালিত চিহ্নিতকরণের বিষয়ে বিআরটিএ’র পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বলেন, ‘গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা বাসে বড় আকারের একটি স্টিকার লাগিয়ে দিচ্ছি, যা দৃশ্যমান এবং দূর থেকে যে কেউ দেখতে পারবেন। বাসটি সিএনজিচালিত নাকি ডিজেলচালিত তা বুঝতে পারবেন। স্টিকারটি বাসের সামনে এবং পেছনে লাগিয়ে দিচ্ছি। ডিজেলচালিত হলে ডিজেলচালিত লেখা স্টিকার থাকবে। সিএনজিচালিত হলে স্টিকারে সিএনজিচালিত লেখা থাকবে। বিষয়টি দেখভালের জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। এছাড়া আমরাতো নজরদারি করবো।’
সারওয়ার আলম বলেন, ‘যেকোনও নাগরিক কিংবা যাত্রী বিআরটিএ-তে ভাড়া বিষয়ক কিংবা অন্য কোনও বিষয়ে অভিযোগ দিতে পারছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মাধ্যমে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ই-মেইল কিংবা ফোন নাম্বারে যেকেউ যেকোনও সময় অভিযোগ জানাতে পারছেন। বিআরটিএ’র নাগরিক সেবা সংক্রান্ত তথ্য জনতে এখন ৩৩৩ নম্বরে অফিস চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযোগ জানাতে পারছেন নাগরিকরা। [email protected] এই মেইলে অভিযোগ পাঠাতে পারছেন নগরবাসী কিংবা যাত্রী। এছাড়াও বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কর্মকর্তার ফোন নম্বর রয়েছে। তাদের ফোন করে যেকোনও নাগরিক কিংবা যাত্রী অভিযোগ জানাতে পারছেন। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি অবহিত করছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডাক্তার সঞ্জীব দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্ধিত ভাড়া কার্যকরের পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা, ডিজেল চালিত বাস না হলেও নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা, তা আমরা মনিটরিং করছি। অভিযানের সময় আমরা দেখতে পেয়েছি, সরকারের নির্ধারিত নতুন ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনার সময় যাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অবহিত হচ্ছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা ডিজেল চালিত বাস পরিচালনা না করেও নতুন ভাড়া নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা এবং জরিমানা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পেক্ষাপটে ভাড়ার বিষয়টি দেখার পাশাপাশি আমরা নিয়মিত যে অভিযান পরিচালনা করে থাকি তাও চলমান রয়েছে। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, বাসের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সনদ, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন ঠিক রয়েছে কিনা, অভিযান পরিচালনার সময় এ বিষয়ে নজর রাখছি। যেকোনও নাগরিক যেকোনও সময় যেকোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পড়লে ৯৯৯ এর মাধ্যমে সহায়তা নিতে পারছেন।’
খবর: বাংলা ট্রিবিউন