ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ ব্যবহারকারীই কোন তথ্য শেয়ার করার সময় সেটির সত্যতা যাচাই করেন না। এমনকি তথ্য শেয়ারের পরের পরিণতি সম্পর্কেও তারা জানেন না। তথ্য ও প্রযুক্তি অপরাধ বিষয়ে কাজ করা সাইবার লাইন নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্প্রতি করা জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
বুধবার (৬ এপ্রিল) সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সাইবার লাইন জানায়, প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্য আর মুঠোফোনের সহজলভ্যতায় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জড়িয়ে আছে ইন্টারনেটের মায়াজালে৷ ইন্টারনেট দৈনন্দিন কাজকে যেমন সহজ করে তুলছে তেমন কিছু ক্ষেত্রে করে তুলেছে দুর্বিষহ৷ ইন্টারনেটের অত্যধিক বিস্তৃতির কারণে বর্তমান সময়ের অধিকাংশ অপরাধগুলোও হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক৷ প্রতিদিন অগণিত মানুষ শিকার হচ্ছে সাইবার অপরাধের৷ সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে অনেকে না বুঝে জড়িয়ে পড়ছে এসব অপরাধে।
সাইবার লাইন গত ২৫ মার্চ ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২ হাজার ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি জরিপ চালায় যার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী অধিকাংশ তরুণ-তরুণী কিভাবে না জেনে-বুঝেই সাইবার অপরাধ করে যাচ্ছে এবং সাইবার অপরাধ সম্পর্কে কতটা অসচেতন।
মিথ্যা তথ্য প্রচার একটি ভয়াবহ সাইবার অপরাধ। সাইবার লাইনের গবেষণায় উঠে এসেছে ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ ভুল তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে জড়িয়ে যাচ্ছেন সাইবার অপরাধে৷ বর্তমানে সামাজিক, রাজনৈতিক, কিংবা ধর্মীয় দাঙ্গার অধিকাংশই ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে হচ্ছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি৷ অধিকাংশ তরুণ-তরুণীরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন তথ্য প্রকাশের পূর্বে এর সত্যতা যাচাই করেন না কিংবা পরিণতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই।
গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫৬ শতাংশ ব্যবহারকারী দৈনিক ৪ ঘণ্টার বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। ১ হাজার ৬২০ জন ব্যবহারকারীই বলেছেন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত নানা তথ্য শেয়ার করেন, যাদের ৯৪ শতাংশ-ই শেয়ার করা তথ্যের সত্যতা যাচাই করেন না। যা মোট জরিপে অংশগ্রহণকারীর ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ। অপর দিকে, মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবহারকারী শেয়ারের পূর্বে তথ্যের সত্যতা যাচাই করেন।
ভুল বা আংশিক সত্য তথ্য শেয়ার করে বিভিন্নভাবে ৮১ শতাংশ ব্যবহারকারী বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়। বাকি ১৯ শতাংশ সরাসরি কোন সমস্যার সম্মুখীন না হলেও পরোক্ষভাবে সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ৭৯ শতাংশ নারীই কোন না কোনভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। আত্মপ্রকাশের ভয়ে যাদের মধ্যে অধিকাংশই তা গোপন করে যান।
সাইবার লাইনের তথ্য মতে, নানাভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে ৭৮ শতাংশ ব্যবহারকারী কোন প্রকার সহায়তা পান না। ২২ শতাংশ ব্যবহারকারী সহায়তা পেলেও তা যথাযথ নয় এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া বলে মনে করেন। ৬৮ শতাংশ ব্যবহারকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে অনিরাপদ মনে করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিরাপদ বলে মনে করেন ৩২ শতাংশ ব্যবহারকারী।
সাইবার লাইনের সার্ভে অ্যান্ড অ্যানালাইসিস টিমের প্রধান শাহরিয়ার সিদ্দিকী শাওন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের অপব্যবহার তরুণদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যাচ্ছে, এমনকি এ সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণরূপে অসচেতন। যার ফলস্বরূপ আমরা বিভিন্ন ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছি এবং অপরাধের শিকারও হচ্ছি। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের সকলের সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অনলাইন, অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে কাজ করা উচিত। ইলেকট্রনিকস এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাহায্যে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হলে তার জন্য যথাযথ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সাইবার এবং আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।