সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রতিষ্ঠার কাজ হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই। প্রকল্পটি আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শতভাগ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
বর্তমানে এই প্রকল্পের প্রায় ৬৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রেললাইন প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে সারা দেশ। বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটবে কক্সবাজারে। দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ৬৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হতে পারে। বাকি কাজগুলো শেষ হতে আরও ছয় মাস সময় লাগবে। তাছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষে রক্ষণাবেক্ষণ ও নানা ক্রটি দেখা গেলে তা সংশোধনের জন্য নিয়মানুযায়ী আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। এ জন্য আরও দেড় বছর সময় দরকার। সব মিলে আরও দুই বছরের জন্য সময় বাড়াতে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রকল্প সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রাম নগরী থেকে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পর্যন্ত আগে থেকেই রয়েছে রেললাইন। সেই রেললাইন এখন সম্প্রসারিত হচ্ছে কক্সবাজার পর্যন্ত। প্রকল্প অনুমোদনের এক বছর পর শুরু হয় দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ। ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরুর পর এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে ৬৩ শতাংশ। ১২৮ কিলোমিটার এই রেললাইনে থাকবে ৯টি স্টেশন। ট্রেনযোগে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক স্টেশন। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর হচ্ছে তিনটি বড় সেতু। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়ায় নির্মাণ হচ্ছে উড়ালসেতু। রামু থেকে মিয়ানমার-সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ ট্রান্স এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। যা মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত। আর তাতেই বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলমান করোনা মহামারীর মধ্যেও দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ থেমে নেই। প্রকল্পের রেললাইন তৈরি করতে মাটি কাটা ও তৈরি করা রেললাইনগুলোতে সিগন্যাল তার বসানোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। ইতিমধ্যে দোহাজারী এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটারের সিগন্যাল তার বসানো হয়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে মাটি কাটা ও ব্রিজ নির্মাণ, রেলট্র্যাকসহ অন্যান্য কাজগুলো। গত জানুয়ারি থেকে রেলট্র্যাক বা রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে কক্সবাজার সদরের রামু উপজেলার পানিরছড়া বাজার এলাকা থেকে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রেলট্র্যাক বসানোর কাজ। চলছে প্রকল্পের আওতাধীন মাটি কাটা, ব্রিজ নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং, কালভার্ট, স্টেশন তৈরিসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজও। এই প্রকল্পে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে। সূত্র জানায়, ১২৮ কিমি. রেলপথে স্টেশন থাকছে ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম। এতে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে ৩টি বড় সেতু। এ ছাড়াও এ রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হবে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং।