ভ্যাকসিনের কাঁধে ভর করে নতুন বছর স্বস্তি নিয়ে এসেছিল। তবে এর মাঝেই ফের খেলা দেখাচ্ছে করোনা। কয়েকটি অঞ্চলে বেড়েছে সংক্রমণের পরিমাণও। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন, তা হলে কি করোনার দ্বিতীয় ধ্বংসলীলার সাক্ষী হতে চলেছে বাংলাদেশ? এই পরিস্থিতিতে কী কী রণকৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে?
করোনার প্রথম পরিস্থিতি থেকে কতটা আলাদা এই সেকেন্ড ওয়েভ?
ইতিমধ্যেই ফের চোখ রাঙাতে শুরু করেছে করোনা। দিনে সংক্রমণের পরিমাণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ফের বাড়ছে। তবে এখনও কোনও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে এই পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, তার উত্তর দেবে আপাতত আগামী দিন।
আবার কি লকডাউন এর সময় বৃদ্ধি পাবে?
বিশেষজ্ঞের মতে, করোনা রুখতে দ্বিতীয়বারের জন্য লকডাউন খুব একটা কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত হবে না। করোনা পরিস্থিতিকে সাময়িক ভাবে থামাতে পারবে এটি। আপাতত, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এক্ষেত্রে উৎপাদন-সরবরাহ তথা সামগ্রিক কাজকর্মকে সচল রাখতে হবে। কারণ দেশের অর্থনীতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে যাবতীয় পদক্ষেপ করতে হবে। প্রয়োজনে ঘরে থাকতে হবে। তবে সংক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য লকডাউনের পথে হাঁটা যাবে না।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই সাত দিনের লকডাউনে কি আছে জেনে নিন-
১. সকল প্রকার গণপরিবহন সড়ক রেল ও অভ্যন্তরীফ্লাইট বন্ধ থাকবে তবে পণ্য পরিবহন উৎপাদন ব্যবস্থা জরুরি সেবা দানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বিদেশগামী বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
২. আইন শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন: ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্র বন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
৩. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবল প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্প কারখানার শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃক শিল্প-কারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ঔষধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবেনা।
৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (Takeway/Online) করা যাবে। কোনো অবস্থাতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
৬. শপিং মলসহ অন্যান্য দোকানসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে দোকানসমূহ পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয় করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবেনা।
৭. কাঁচা বাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর কত দিন মাস্ক পরে বাঁচতে হবে মানুষজনকে?
এই বিষয়ে সুনিশ্চিত কিছু বলা খুব কঠিন। কারণ কখন করোনা ফের তার মারণ রূপ ধারণ করবে, তা বলা মুশকিল। এক্ষেত্রে করোনার নতুন মিউটেশনের প্রতি নজর রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তাই আপাতত মাস্কই সঙ্গী। মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্বের বিধি-নিষেধ।