ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক
গ্রামীণ সড়কগুলোর জন্য আলাদা আইডি নাম্বার থাকলেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে এমনটা দেখা যায় না। এ জন্য সড়কের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের। অনেক সময় একই রাস্তা ভিন্ন ভিন্ন নামে টেন্ডার করে বিল উঠিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ জন্য সড়কগুলোর আইডি নাম্বার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাগেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে গ্রামীণ রাস্তাগুলোর নামকরণের জন্য দুই ধরনের ডাটাবেজ করা হয়। আর তা হচ্ছে—রোড স্ট্রাকচার ও ব্রিজ এবং জিআইএস ডাটাবেজ। এই গ্রামীণ রাস্তাগুলোকে উপজেলা রোড, ইউনিয়ন রোড, ভিলেজ টাইপ ‘এ’ ও ভিলেজ টাইপ ‘বি’ ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়। বর্তমানে ডাটাবেজে রাস্তার সব তথ্য রয়েছে। ডাটাবেজের কোন রাস্তা পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে যুক্ত হলে ডাটাবেজ হতে তা বাদ দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের সব পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের রাস্তাগুলোর কোনও আইডি নম্বর নেই। রাস্তাগুলো স্থানীয় এলাকা বা ব্যক্তির নামে রয়েছে। অনেক রাস্তার কোনও নামও নেই। এ অবস্থায় অনেক সময় রাস্তাগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় প্রবেশ করলেও এলজিইডি তাদের বলে দাবি করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে একই রাস্তার ভিন্ন ভিন্ন নাম উল্লেখ করে কয়েক বার টেন্ডার করে অর্থ তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে বিভাগের সম্মেলন কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও সিলেট সিটি করপোরেশনে চলমান আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় সড়কের আইডি নাম্বার প্রদানের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
অবশিষ্ট ৯টি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সড়কগুলোর আইডি নম্বর প্রদানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে সভার আয়োজন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ৮টি বিভাগের ৮টি পৌরসভার সড়ক আইডি নম্বর প্রদানের বিষয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণ করবে। উক্ত প্রকল্পের ফলাফলের ভিত্তিতে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির পৌরসভার সড়কগুলোর পর্যায়ক্রমে আইডি নম্বর দেওয়া হবে।
আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম জানান, প্রকল্পটির দুটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি কম্পোনেন্টে দুর্যোগ নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। আরেকটি কম্পোনেন্ট জিআইএস নির্ভর জরুরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে কাজ করার জন্য একজন পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং সিলেট সিটি করপোরেশনে কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃক সব গ্রামীণ সড়কের আইডি নম্বর দেওয়া হয়েছে। ওই আইডির মাধ্যমে তারা সড়কগুলোর উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের রাস্তাগুলো বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এলাকার নামে পরিচিত। এলজিইডির মতো পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের আওতাধীন রাস্তাগুলোর আইডি নম্বর দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডি’র আওতাধীন রাস্তাগুলোর আইডি নম্বর থাকলেও আমাদের সিটি করপোরেশনের রাস্তার আইডি নম্বর নেই। সিটি করপোরেশন এলাকার রাস্তাগুলোর আইডি নম্বর দেওয়া দরকার। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের একটি কম্পোনেন্টের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের রাস্তার আইডি নম্বর প্রদানের বিষয়ে একটি প্রাথমিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। আমরা প্রতিটি সড়কের জন্য আলাদা কোড নাম্বার চালুর কাজ করছি। এ জন্য কয়েকটি সভাও করা হয়েছে। সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
খবর: বাংলা ট্রিবিউন