সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
অতিমাত্রায় সুদ পরিশোধ ও ঋণের লাগাম টানতে সঞ্চয়পত্রে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম (জুলাই-এপ্রিল) ১০ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপরও বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। বিশাল অংকের ঘাটতি বাজেটের অর্থ সংস্থানে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে সক্ষমতার উন্নয়ন, বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সঙ্গে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো। আসছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণকে ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার।
আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। বিশাল এ ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে।
ছক অনুযায়ী, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সরকার সবচেয়ে বেশি ধার নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এরপর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আর অন্যান্য খাত থেকে আসবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৩০ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ২৯ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা শোধ করেছে। এতে চলতি অর্থবছরের ৩০ মে পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। যেখানে পুরো অর্থবছরে সরকারের ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা।
এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরে রেখেছে সরকার।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৭২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এবার ১০ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছে, অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়েছে। আবার ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এ কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ কমিয়েছেন।
পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণ নেয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নিয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।