ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
কর্মীদের হাজিরা থেকে শুরু করে, উড়োজাহাজের চার্জ আদায়সহ বিভিন্ন কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে দেশের বাকি বিমানবন্দরও বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। তবে এ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের লাইসেন্সের মেয়াদ পার হয়েছে ৯ মাস আগে। ফলে যেকোনও সময় সাইবার অ্যাটাক বা ভাইরাসের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বেবিচকের ডেটা সেন্টার।
নিজস্ব প্রযুক্তিবিদ না থাকায় বেবিচকের ডেটা সেন্টার, সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এতেও আছে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি।
জানা গেছে, বেবিচকে পরিচালনা ও পরিকল্পনা, এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে, প্রশাসন, অর্থ, নিরাপত্তা, ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স, প্রকৌশল বিভাগ থাকলেও আইটি বিভাগ নেই। রাডার, টেলিকমিনিউকেশন, নেভিগেশনের বিভিন্ন বিষয় পরিচালিত হচ্ছে বেবিচকের নিজস্ব জনবলে। এজন্য রয়েছে কমিনিউকেশন, নেভিগেশন, সার্ভেইল্যান্স (সিএনএস) বিভাগ। একই বিভাগ সফটওয়্যার সল্যুশনসহ প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোও দেখাশোনা করছে।
এসব যন্ত্রপাতি কেনাকাটা করছে বেবিচকের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টোর ইউনিট (সেমসু)। সেখানেও নেই দক্ষ প্রযুক্তিবিদ। সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার যুক্ত হলেও তা দেখাশোনা করছে সিএনএস বিভাগ। যেখানে নেই কোনও প্রোগ্রামার বা কম্পিউটার প্রকৌশলী। ফলে বেবিচকের প্রযুক্তিগত পরামর্শ, দরপত্র যাচাই, ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণসহ যাবতীয় কাজে নির্ভর করতে হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের ওপর।
সূত্র জানায়, বেবিচকের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান), ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (ওয়ান), ডেটা সেন্টার, ৩৫টি বিভিন্ন মডিউলের সফটওয়্যার, বিভিন্ন কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাউথটেক লিমিটেড। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ম্যানেজড আইসিটি সাপোর্ট সার্ভিসের আওতায় বেবিচকের সকল বিভাগ, শাখা ও ইউনিটের আইসিটি ও ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে দায়িত্ব দেয় বেবিচক।
সূত্র জানায়, প্রায় ১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সাউথটেককে দায়িত্ব দেয় বেবিচক। তিন বছর মেয়াদে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সাউথটেকের। ২০২১ সালের ২৪ জুন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। পরে আবারও তিন বছরে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ৩০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা প্রস্তাব করে সাউথটেক। তবে সাউথটেকের এই আর্থিক প্রস্তাব বেশি মনে হওয়ায় বেবিচক কমিটি গঠন করে অন্য প্রতিষ্ঠানের দরপত্র যাচাই করার উদ্যোগ নেয়। এ অবস্থায় নতুন করে কাউকে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত সাউথটেককেই সেবা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় বেবিচক।
কেন লাইসেন্স নবায়ন জরুরি জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মো. তুহিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নতুন ভাইরাস ও হ্যাকিং থ্রেট তৈরি হচ্ছে। সেগুলো প্রতিরোধ করতে সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রটেকশন সল্যুশন তৈরি করে। লাইসেন্স নবায়ন না করলে সেই সল্যুশন আপডেট হবে না।’
নতুন করে চুক্তি প্রসঙ্গে বেবিচকের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টোর ইউনিটের (সেমসু) নির্বাহী পরিচালক মো. মহসিন বলেন, ‘বিভিন্ন সফটওয়্যার দিয়েছে সাউথটেক। তারা জানিয়েছে লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। আমরা দরপত্র আহ্বান করেছি। শিগগিরই নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে যোগ্য প্রতিষ্ঠানই কাজ পাবে।’
সাউথটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মামনুন কাদের বলেন, বেবিচকের সফটওয়্যার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি আমাদের প্রতিষ্ঠান করছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশের স্বার্থে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু জটিলতা হচ্ছে সফটওয়্যারের মেয়াদ নিয়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে এগুলো নবায়ন করা জরুরি। আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে যতটা সম্ভব প্রটেকশন দিচ্ছি। এ বিষয়ে বেবিচককে জানিয়েছি।’
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, আমাদের আইটি টিম আছে। তবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সংখ্যার বিচারে আমাদের টিম যথেষ্ঠ শক্তিশালী নয়। এজন্য আউটসোর্সিংয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি নিজস্ব জনবলকে দক্ষ করে তুলতে। নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলমান। এটা সম্পন্ন হলে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মীদের দক্ষ করে তোলা হবে। তখন বেবিচক নিজেই সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে।