ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য (এনবিএফআই) করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন থেকে ব্যাংক সিএসআর খাতে যে পরিমাণ খরচ করবে তার অন্তত ৩০ শতাংশ দিতে হবে স্বাস্থ্য খাতে। যা এতদিন ছিল ২০ শতাংশ। এছাড়া পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খাতে ব্যয়ের হার বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে ব্যয়ের হার আগের মতোই ৩০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক সিএসআর ব্যয়ের নতুন এ নীতিমালা জারি করে।
সিএসআর খাতে ব্যয়ের বিষয়ে ২০১৪ সালে প্রথমবার নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার আরও বিস্তারিত আকারে নীতিমালা করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় সিএসআর ব্যয়ের হার পুনর্বিন্যাস ছাড়াও সংজ্ঞা, উদ্দেশ্যসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এরকম খাতে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোরশেদ মিল্লাতের নেতৃত্বে একটি দল নতুন এ নীতিমালা প্রস্তুত করে।
খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত জানান, ‘আগের নীতিমালায় সিএসআরের সংজ্ঞা ছিল না। এখন এটি স্পষ্ট করা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছরে যে পরিমাণ সিএসআর ব্যয় করবে, তার প্রতিটি খাতের ব্যয়ের হার বলে দেওয়া হয়েছে।’
সিএসআর ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণের জন্য সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, অবহেলিত প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ, অসহায়, হত দরিদ্র, পথ শিশুদের জন্য ব্যয় করার ওপর জোর দিতে হবে। বাছাই প্রক্রিয়া কী হবে তা বলে দেওয়া হয়েছে এবারের নীতিমালায়। এক্ষেত্রে যে খাতে ব্যয় হচ্ছে প্রথমে তার প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করতে হবে। এরপর যাদের মাঝে দেওয়া হবে তাদের বাছাই করতে হবে। কোন এলাকায় দেওয়া হবে সেটা ঠিক করতে হবে। কী পরিমাণ বিতরণ করা হবে তাও ঠিক করতে হবে। আর এসব কিছুর তথ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে রাখতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, সিএসআরের অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় না হলে দায়বদ্ধ থাকবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এজন্য অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে যথাযথ খাতে ব্যয় হয়েছে কিনা তা পরিদর্শন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো সন্দেহজনক কাজে ব্যয়ের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা বা দেশের বাইরে বিনোদনমূলক কাজে সিএসআরের টাকায় স্পন্সর হওয়া যাবে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক উন্নয়ন খরচ এখান থেকে করা যাবে না। আবার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজে সামাজিক দায়বদ্ধতার টাকা খরচ করা যাবে না। এছাড়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, শিশু শ্রম, সামাজিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি তৈরি করে এমন খাতে সিএসআর করা যাবে না। এ ধরনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
নতুন নীতিমালায়, শিক্ষা খাতে ব্যয়ের হার ৩০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের হার ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ করতে বলা হয়েছে। অবশ্য করোনার কারণে গত ২ বছর স্বাস্থ্য খাতে ৬০ শতাংশ ব্যয়ের নির্দেশনা ছিল। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খাতে ব্যয়ের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, খেলা ও বিনোদনে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সিএসআরের অপব্যবহার বন্ধ এবং একই ব্যক্তি একই সময়ে যেন একাধিক ব্যাংক থেকে সুবিধা না পায় সেজন্য তারা একটি তথ্য ভাণ্ডার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেখানে সিএসআর সুবিধা পাওয়া ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। ব্যাংকগুলো ডাটাবেইজ থেকে তথ্য যাচাই করে সিএসআর করবে। এছাড়া নতুন নীতিমালার আলোকে শিগগিরই ব্যাংকগুলোর জন্য একটি রিপোর্টিং ফরমেট দেওয়া হবে।