সেবাখাতে কার্যক্রম বাড়াবে ভোক্তা অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাজার মনিটরিং এর পাশাপাশি সেবাখাতেও কার্যক্রম বাড়াবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিং’এ বিশেষ নজর দিবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত এই অধিদপ্তর।

ভোক্তা অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এসব কথা বলেন।

রবিবার বিকালে কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর নেতৃবৃন্দের সাথে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

মতবিনিময় সভায় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমানের অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ মোঃ শাহনেওয়াজ চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ মোঃ মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান, ক্যাব কেন্দ্রিয় সমন্বয়কারী আহমেদ একরাম উল্লাহ, তথ্য কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা, উপ-পরিচালক আফরোজা রহমান, উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস।

মতবিনিময় সভায় ক্যাব এর নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ভোক্তা অধিকারের বিষয়ে পরামর্শ এবং সমাধানের পথ জানতে চান ডিজি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

এসময় ক্যাবের পক্ষ থেকে প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম বলেন, ভোক্তা অধিকারে এখন কম মানুষ অভিযোগ করে। কারণ তারা প্রতিকার পাচ্ছে না। ভোক্তাদের উদবুদ্ধ করতে হবে যাতে তারা কোথাও ভোক্তা হিসেবে প্রতারিত হলে অভিযোগ করুক। অভিযোগ করলেই যথা নিয়মে সে একটি সমাধান পাবেন। ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ। এটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাহলে হয়তো একসময় আসবে যখন আমাদের আর কোন অভিযোগ থাকবে না এবং অভিযোগ নিস্পত্তির বিষয়টিও থাকবে না।

তিনি বলেন, খুচরা বাজারে মনিটরিং এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে ভোক্তা অধিকার নিশ্চত করা খুব কঠিন। আমাদের পাইকারি বাজারের দামের উপর মনিটরিং করতে হবে। হঠাৎ করেই পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাইকারি বাজার অনেকটাই অদৃশ্য। সেখান থেকে কেনাবেচা কিভাবে হয় তা জানা যায় না। সেই জায়গাটা দৃশ্যমান করার জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার, সেই বিষয়ে আমার দুটি প্রস্তাব রয়েছে। দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করা এবং তা যদি বাস্তবায়ন না হয়, এটি যে একটি অপরাধ তার আলোকে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, যেসব রেগুলেটরি বডি আছে, যেমন বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিইআরসি এগুলোর সঙ্গে ভোক্তা অধিকারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই সব জায়গায় ক্যাব সদস্য। সুতরাং ক্যাব এদের মধ্যে বন্ডিং এর কাজ করতে পারে। সেই বন্ডিংটাই এখন প্রয়োজন। আশা করি, আমরা একটি রোড ম্যাপ বা এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করবো। সেই এ্যাকশন প্ল্যান অনুসরণ করে আমাদের জায়গাগুলো শক্তিশালি করবো এবং ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করবো।

এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, বাজারে শুধু দোকানদারদের জরিমানায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। পাশাপাশি বড় বড় সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে আমরা সব সময় সহযোগীতা পেয়েছি। আমরাও সবসময় তাদেরকে সহযোগীতা করেছি। আমরা ভোক্তা অধিকারের স্বার্থে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হয়ে কাজ করবো। তারাও আমাদের কাজ থেকে সব রকম সহযোগীতা পাবেন।

কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ভোক্তারা প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করলে সেই অভিযোগ দ্রুত নিস্পত্তি করার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ অনেক সময় নিস্পত্তি দেরিতে হওয়ায় ভোক্তারা অভিযোগ করতে আগ্রহ পায় না। এছাড়া বাজার মনিটরিং এর পাশাপাশি সেবাখাত সহ ভোক্তার অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটি খাত নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো উচিত।

এ সময় সফিকুজ্জামান বলেন, সেবা খাত নিয়ে শিগগির বড় কাজ হবে। বাসায় গ্যাস না পেলেও দাম দিতে হচ্ছে- সেটা অন্যায়। আবার দুই বছর স্কুল বন্ধ থাকলেও বেতন কমেনি, ড্রেস, খাবার, বই, স্টেশনারী বাবদ অস্বাভাবিক অর্থ আদায় হচ্ছে, এগুলো দেখা হবে এখন।

তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে বিগত সময়ে ই-কমার্স নিয়ে হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে। সেগুলো সমাধান করতে গিয়ে অন্যান্য বিষয়ের অভিযোগগুলোয় ধীর গতি হয়েছে। পাশাপাশি করোনা প্যান্ডেমিকের কারণে কাজ কিছুটা কমেছে। ফলে অভিযোগ নিষ্পত্তি কম হয়েছে। এখন সেটা আবার আগের গতিতে ফিরে আসবে।

আসন্ন রোজায় ট্রেডিং করপোরেশন আব বাংলাদেশ ও ভোক্তা অধিকার সমন্বয় করে মাঠে থাকবে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হচ্ছে। টিসিবি তার কর্মপরিধি আরও বাড়াবে। সেটার সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সমন্বয় করবে।

ই-কমার্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে ইভ্যালির মতো আরেক বড় প্রতিষ্ঠনের অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কাজ করতে গিয়ে অধিদপ্তর বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়। এখন সেসব বাধাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে এসেছি। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতারিত ভোক্তাদের প্রতিকার দিতে চাই।

তিনি আরও বলেন, শুধু পণ্য নয়, সার্ভিস ক্ষেত্রে বড় অপারেশন করব শিগগির। তাতে যে চালেঞ্জ আসবে, সেটা মোকাবিলা করব। সেটা না পারলে এ দায়িত্বে থাকার যৌক্তিকতা নেই।

আরইউ