ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
পবিত্র রমজানে সেহেরি ও ইফতার সামগ্রীর বদলে গরিব-অসহায় পরিবারকে নগদ অর্থ দিলে বেশি উপকৃত হবে বলে মনে করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন।
ভোক্তাদের স্বার্থ, অধিকার, আচরণ নিয়ে এক যুগের বেশি কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, রমজানের শুরুতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি যখন স্বজন বা গরিবদের জন্য একসঙ্গে অনেকে বস্তা বস্তা চাল, ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, লবণ কিনতে থাকেন তখন বাজারে বাড়তি চাহিদার সৃষ্টি হয়।
এতে সরবরাহে টান পড়ে। একই পরিবারকে যদি ৪-৫ জন সেহেরি বা ইফতারের কাঁচা পণ্য দেন তাহলে কিছু পণ্য পচে যাওয়ার, কিছু পণ্যে পোকা ধরার শঙ্কা থাকে। আবার অনেক গরিবকে আমরা সেহেরি ও ইফতারির কাঁচা উপকরণ দিচ্ছি যাদের চুলাও নেই রান্নার জন্য। তারা এসব পণ্য বিক্রি করে ন্যায্যমূল্যও পান না। যদি তাদের হাতে আমরা টাকা দিই তাহলে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতে পারে। মোবাইলে দ্রুত ও নিরাপদে টাকা পাঠানো যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই সরকার ১ কোটি পরিবারে টিসিবির কার্ড দিয়েছে। পাশাপাশি বিত্তবান, দানশীল, হৃদয়বান ব্যক্তিরা প্রচুর দান, অনুদান, সহযোগিতা করছেন মানুষকে। নাগরিক দায়িত্ব হচ্ছে কৃত্রিম সংকট, অনাকাঙ্ক্ষিত বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি যাতে না হয় সে জন্য ছোট ছোট উদ্যোগ নেওয়া। দেশে করোনা পরিস্থিতি, কলকারখানার উৎপাদন, আমদানি-রফতানি সব যখন স্বাভাবিক আছে তাহলে রমজানের শুরুতে পুরো মাসের বাজার, পরিবার-স্বজনদের পুরো মাসের বাজার একসঙ্গে কেনার যৌক্তিকতা নেই। যদি প্রতি সপ্তাহের বাজার করার মানসিকতা, সংস্কৃতি গড়ে ওঠে তাহলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। বাড়তি চাহিদার সৃষ্টি হবে না।
দান-খয়রাত ও জাকাত দরিদ্র মানুষের প্রতি করুণা নয় উল্লেখ করে ক্যাবের এ নেতা বলেন, এটা তাদের অধিকার হলেও জাকাতের কাপড় বিতরণের সময় একসময় প্রতিবছর বিপুল পরিমান প্রাণহানি ঘটত। সেহেরি ইফতার সামগ্রী বিতরণকালে অনেক সময় অপচয় ও চুরি হয়। টনে টনে ইফতার কেনা, প্যাকেট করা, ঘরে ঘরে পৌঁছানো সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল একটি ঝামেলার কাজও। টাকা দেওয়া অনেক সহজ।
এসএম নাজের হোসাইন বলেন, মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাটে বাজারে বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন নকল পণ্যে সয়লাব, বিশেষ করে ঘি, মসলা, সেমাই, হোটেল রেস্তোরাঁয় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল, পচা-বাসি খাবার পরিবেশন, ফরমালিন ও সার মিশ্রিত মাছ, ফলমূল-শাক সবজিতে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মেশানো, ওজনে কম দেওয়া, গরুর মাংস বলে মহিষের মাংস বিক্রি, রাস্তার ওপর খোলা ইফতারি বিক্রি, বিএসটিআইর সিল ছাড়া ওজন স্কেল, বাটখারা ব্যবহার করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের জীবনকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
ভেজালকারী ও ক্যামিকেল মিশ্রণকারীরা বর্তমানে সন্ত্রাসীদের থেকে ভয়ংকর সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে। তাদের মানববিধংসী তৎপরতার কারণে হাজার হাজার মানুষ জটিল, কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে নতুবা সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে। শুধু জরিমানা করলে হবে না, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
খবর: বাংলানিউজ২৪.কম