।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
পণ্য কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিকারের জন্য ভোক্তারা ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র : কল সেন্টার’-এ অভিযোগ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদন বলছে, তাদের আনীত বেশ কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণীত হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভোক্তার সঙ্গে সমঝোতা করে পার পেলেও দণ্ডিত হয়েছে ‘স্বপ্ন’, ‘ডেইলি শপিং’, ‘বেস্ট ইলেকট্রনিক্স’ ও ‘ডাচ বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ’।
অভিযোগ প্রমাণীত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬৮,০০০ টাকা জরিমানা করে ট্রাইব্যুনাল। জরিমানার অর্থ থেকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ভোক্তারা মোট পান ১৭,০০০ টাকা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাদের তদারকিতে এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার পান্থপথ থেকে পরিচালিত হয় এই কল সেন্টারের কার্যক্রম। ডিসেম্বর মাসে কল সেন্টারে মোট ফোন এসেছে ১২৯টি। ই মেইল এসেছে ১৫টি। প্রত্যেক ভোক্তাকেই তথ্য ও পরামর্শভিত্তিক প্রাথমিক সেবা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতীত এই মাসে কল সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে মোট ২৪ দিন।
ডিসেম্বর মাসে ভোক্তাদের উত্থাপিত নানা বিষয় থেকে বাছাই করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মোট ২০টি। এসব অভিযোগ এখন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এর আগে নভেম্বর মাসে দায়ের করা হয়েছিল ৪০টি অভিযোগ। জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ মাসে ভোক্তাদের অভিযোগের গতি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে আগের দায়েরকৃত অভিযোগের মধ্যে ৮টির শুনানী সম্পন্ন হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ৭টি অভিযোগ। এর মধ্যে ৩টি অভিযোগের ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে।
জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ‘ডাচ-বাংলা ফুড এন্ড বেভারেজ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তিনি ওই কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কেনার পর দেখতে পান, এসব পণ্য সরকার অনুমোদিত নয়। পণ্যগুলো ফেরত দিতে চাইলেও তারা নেয় না। অনেক দিন ধরে কোম্পানির লোকদের পেছনে ঘোরাঘুরি করে কোনো সমাধান পাননি। পরে ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র : কল সেন্টার’-এ অভিযোগ করেন তিনি।
কল সেন্টার থেকে দ্রুততার সঙ্গে অভিযোগটি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। অভিযোগের ওপর দুই দফা শুনানী হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ লাখ টাকা ফেরত দেবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ওপর জরিমানা আরোপ করা হয় ৫০ হাজার টাকা। ভোক্তা এই জরিমানার টাকা থেকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা বুঝে পেয়েছেন।
ডিসেম্বর মাসে নানা ধরনের অভিযোগ এসেছে বলে জানান কল সেন্টারের কর্মকর্তারা। প্রাণ আরএফএল গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন ঢাকাস্থ একজন ভোক্তা। অভিযোগে তিনি বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যায় প্রিন্স বাজার, পল্লবী থেকে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের রুটি কিনেন। রুটিতে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ছিল ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখের। কিন্তু ভোক্তা ১৮ তারিখ সকালে রুটির প্যাকেটটি খুলে দেখেন, প্যাকেটের ৫টি রুটির ভেতরে ২/৩ টি রুটিই ছত্রাকে পরিপূর্ণ। তার মতে, অবিক্রিত রিটার্ন নেয়া পুরাতন রুটিই নতুন রুটির প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করছে প্রাণ আরএফএল গ্রুপ। এই প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোক্তা।
এয়ারটেলের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকার একজন ভোক্তা। অভিযোগে তিনি বলেন, এয়ারটেল মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা জনগণকে প্রতারিত করছে। ১১ ডিসেম্ভর তার নাম্বারে এয়ারটেলের মেসেজ আসে যা ছিল “১৮ টাকা রিচার্জে ৪৫প/মি রেট+ ট্যাক্স, সকল লোকাল নম্বরে! মেয়াদ ৩০ দিন” তিনি মেসেজটি দেখে সেইদিনই তৎক্ষনাত ১৮ টাকা রিচার্জ করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরতি মেসেজ আসে এয়ারটেল থেকে যেখানে লেখা ছিল “তিনি ৪৫প/মি কলরেটটি পেয়েছেন ৩০ দিনের জন্য”। কিন্তু ১৫ই ডিসেম্ভর এয়ারটেল থেকে আবার মেসেজ আসে যে তার ৪৫ প/মি কলরেটটি আগামীকাল শেষ হচ্ছে। যেটার মেয়াদ বিজ্ঞাপনে দেয়া ছিল ৩০ দিন। মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে এয়ারটেল প্রতারণা করেছে, যা কিনা তার ভোক্তা অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে এবং যার ফলে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন।
অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ঢাকাস্থ একজন ভোক্তা। অভিযোগে জানিয়েছেন, তিনি চায়না ফ্যাশন নামে একটি অনলাইন পেজ থেকে একটি জ্যাকেট অর্ডার করেন “এম” সাইজের। কিন্তু যখন জ্যাকেটটি পান তা ছিল অন্য মডেলের পুরনো একটি “ডাবল এক্সেল” সাইজের জ্যাকেট। যখন তাদের সাথে ভোক্তা এ বিষয়ে যোগাযোগ করেন তারা খারাপ ব্যাবহার করে এবং জানিয়ে দেয় যেটা পেয়েছেন সেটাই ব্যাবহার করেন। এরপর ভোক্তা তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বিফল হন। এমতাবস্থায় ভোক্তার প্রশ্ন এই অনলাইন প্রতারণা থেকে কখন রেহাই পাওয়া যাবে? এভাবেই কি তারা অনলাইনে প্রতারণার শিকার হয়ে তাদের কষ্টের টাকা বিসর্জিত করবে?
ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক অরুণিমা ইসলাম বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে, ভোক্তাকে সেবা দিতে পারছি। ১ নভেম্বর থেকে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আবার নির্বাচন গেল। আশা করছি এখন অভিযোগ নিষ্পত্তি কার্যক্রম আরও গতি পাবে। অভিযোগ করে ভোক্তারা যে সেবা পাচ্ছেন, এই তথ্য জনগণের মধ্যে আরও বেশি করে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। মানুষ তাহলে সাহস পাবে, কী অভিযোগ পাঠানো যায়, তারা জানতে পারবে। যত বেশি প্রচার হবে তত বেশি সচেতনতা বাড়বে। মানুষ সচেতন হলে এই খাতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতাও হ্রাস পাবে।’
তিনি আরও জানান, ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র : কল সেন্টার বাংলাদেশের ভোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ভোক্তারা কোনো পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হলে এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। ফোন, ই মেইল, চিঠি কিংবা সরাসরি হাজির হয়ে অভিযোগ দায়ের করা যায়। ০১৯৭৭০০৮০৭১, ০১৯৭৭০০৮০৭২ নম্বরে বা [email protected] ইমেইলে অভিযোগ পাঠানো যাবে। কল সেন্টার থেকে এসব অভিযোগ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। অধিদপ্তরে অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে থাকেন। এর মাধ্যমে ভোক্তা প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পেয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগও রয়েছে।’