ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
রাজধানী আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে পদে পদে হয়নারির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। লাইনে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই চোখে পড়ে দালালদের দৌড়াত্ব।
বরিশাল থেকে রাজধানী আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন মামা-ভাগিনা। তারা সিরিয়ালে দাঁড়ালে লিটন নামের এক ব্যক্তি তাদের কাছে গিয়ে বলছেন, এভাবে সিরিয়াল ধরলে সন্ধ্যা নেমে আসবে, কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না। আর আমি করে দিলে কয়েক ঘণ্টায় ডিসমিস।
কিশোরগঞ্জ থেকে নামের বানান ঠিক করতে এসেছেন এক ব্যক্তি। তার নামের বানান ঠিক করতে পাসপোর্ট অফিসের একজন তার কাছে ১৫ হাজার টাকা চেয়েছে। তিনি বলেন, আজ আসছি ওনার সাথে কথা বলার জন্য। আমারও দ্রুত এটা ঠিক করা দরকার।
নবাবগঞ্জ থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করতে এসেছেন একজন সৌদি প্রবাসী। তিনি বলেন, আমি সপ্তাহখানিক আগেও এসেছিলাম। কেফায়েত নামক এক ব্যক্তি আমাকে কয়েকদিন ধরে ঘুরাচ্ছেন। তিনি আমার কাছে আট হাজার টাকা চেয়েছেন, আমি চার হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু আজ না কাল বলে শুধু ঘুরাচ্ছেন।
এখানে আসা গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন দালাল চক্রের হাতে। কাউকে কৌশলে আবার কারো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করে বিপাকে ফেলছেন এরা।
সৌদিপ্রবাসী নাজমুল জানান, তিনি একজন শ্রমিক। এমআরপি পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তিনি ই-পাসপোর্ট করতে আসছেন। গত চার-পাঁচ মাস ধরে আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে বারবার এসেও ই-পাসপোর্ট করতে পারছেন না।
নাজমুল বলেন, আমার নামের বানানে সামান্য ভুল আসছে, যার কারণে এই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাকে। আজ না কাল করতে করতে চার-পাঁচমাস হলেও এখনও ঠিক করতে পারছি না। যতবারই যাই, ওরা বলে, আপনারটা প্রসেসিং এ আছে। কাল আসেন, খুব দ্রুত হয়ে যাবে।
পরিবারসহ মালদ্বীপ ঘুরতে যাবেন মালিহা। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ই-পাসপোর্ট জটিলতায় সেটি পারছেন না। মালিহা বলেন, আমাদের মালদ্বীপ যাওয়া আটকে আছে কেবল ই-পাসপোর্ট এর জন্য। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে আমাদের আর ই-পাসপোর্ট এর কি কাজ!
পাসপোর্ট অফিসে দ্রুত কাজের সমাধানের জন্য মানুষ আগে থেকেই লাইনে দাঁড়াতে চলে আসে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এখানকার দালাল চক্র। যারা নিজেদের নাম, অবস্থান আর ভুয়া মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে প্রতারিত করছেন গ্রাহকদের।
ভোর থেকে এরা সাধারণত ১১টা নাগাদ থাকে। এই সময়টাতে পুলিশের উপস্থিতি আর নজরদারি একটু কম থাকে বলে তারা সময়টাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষদের সাথে প্রতারণা করে থাকে। র্যাবের চলমান দালালবিরোধী অভিযানেও বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিস থেকে অনেককে আটক করা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাও হয়েছে তাদের।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মূলত সার্ভার সমস্যার কারনে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ই-পাসপোর্ট সমস্যায় ভুগছেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার করে আবেদন পেন্ডিং হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে পাসপোর্ট হাতে পেতে অনেক সময় তিন-চার মাসও লেগে যায়।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সার্ভারের সমস্যা হওয়ার কারণেই এমন জটিলতা আর প্রতারণা বেশি দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সার্ভারের গতি বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ওপরেই জোর দিয়েছেন এই পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
এছাড়া দালাল চক্রের হয়রানি থেকে দ্রুত বাঁচার সমাধানও চাচ্ছেন তারা। সহযোগিতা করার নামে গ্রাহকদের নিঃস্ব করে দিচ্ছেন এসব দালালরা।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে অধিদপ্তরের প্রতিটি কক্ষ সিটি টিভির আওতাভুক্ত হওয়ায় দালালের দৌরাত্ম্য কমেছে। তবে দালাল নেই বা কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সঙ্গে তাদের যোগসূত্র নেই, তা জোর দিয়ে বলা যাবে না বলেও জানিয়েছেন সেখানকার কর্মরত কর্মকর্তারা। এছাড়া এমন চক্র এখন অনেকটা কমে গিয়েছে বলেও জানান তারা।