নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ও ‘ট্রেজারি বিল’ নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে তিন দিনে ১৭ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের বার্ষিক সুদ দেওয়া হচ্ছে এক দশমিক শূন্য এক শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ এক দশমিক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদ এক দশমিক ৬৯ শতাংশ। ৩৬৪ দিন মেয়াদি একই বিলের সুদ দুই দশমিক ৬৯ শতাংশ।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশের সব নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিলামে বিড দাখিল করতে পারে। তবে ব্যাংকগুলোই এ নিলামে বেশি অংশ নেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম নিলামে সাত দিন মেয়াদি বিলে এক দশমিক শূন্য এক শতাংশ সুদে তিন হাজার ৬১৯ কোটি এবং ১৪ দিন মেয়াদি বিলে এক দশমিক ৩০ শতাংশ সুদে তিন হাজার ৯৫০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ৯১ দিন মেয়াদি বিল বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে তুলে নেয় দুই হাজার কোটি টাকা। এ অর্থের বিপরীতে সুদ হয়েছে এক দশমিক ৬০ শতাংশ। একই দিনে এক বছর (৩৬৪ দিন) মেয়াদি দেড় হাজার কোটি টাকার বিল বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক্ষেত্রে সুদহার নির্ধারণ করা হয় দুই দশমিক ৬৯ শতাংশ। এছাড়া, ৯ তারিখ ৩০ দিন মেয়াদি তিন হাজার ৪২৫ কোটি টাকার বিল কিনেছে বিভিন্ন ব্যাংক। যার সুদহার ছিল এক দশমিক ৬০ শতাংশ।
এদিকে, দীর্ঘ আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম ডেকে ১৯ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা তোলা হয়। ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি বিলে পাঁচ দিনের নিলামে অংশ নিয়ে এ পরিমাণ টাকা রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা তোলা হয় গত ১১ আগস্ট।
ওই দিন ৩০ দিন মেয়াদি বিলে শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ সুদে এ পরিমাণ অর্থ তোলা হয়। গত আগস্টের আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম হয়।
বাজারে অতিরিক্ত তারল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুদ্রাবাজারে স্থিতি বজায় রাখতে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে আরও কয়েকটি নিলাম হবে। এর আগে, গত ১ সেপ্টেম্বর সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে জানানো হয়েছিল, চলতি মাসের ৯ ও ২১ সেপ্টেম্বর সাত ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের এবং ৭, ১৯ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৩০ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম হবে।
২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য দুই শতাংশ তথা দুই পয়সা সুদে সাত দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল। বাজারে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে যাওয়ায় গত ৯ সেপ্টেম্বর সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে নিলামের বিষয়টি জানানো হয়।
গত ২৯ জুলাই চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে অস্থিরতা তৈরি করলে তা তুলে নেওয়া হবে। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না।
আশানুরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় গত জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় দুই লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। বিধিবদ্ধ নগদ তারল্য (সিআরআর) সংরক্ষণের পর গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে একেবারেই অলস ছিল ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অলস এ অর্থ থেকে ব্যাংক কোনো সুদ পায় না। এ অর্থ যেন অনুৎপাদনশীল খাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতি ওপর চাপ তৈরি করতে না পারে, সেজন্য এভাবে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।