সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ১ হাজার ৭৫৪ প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় হবে।
বুধবার (২ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভায় উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) উপস্থাপন করা হয়।
উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটাই চূড়ান্ত উন্নয়ন বাজেট। এর আগে আমরা শঙ্কায় ছিলাম। সব কিছু ছাপিয়ে শঙ্কা কাটিয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সরকার চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছিল। তবে অনেক প্রকল্পে সব টাকা ব্যয় হচ্ছে না। ফলে সংশোধিত এডিপি বা চূড়ান্ত বরাদ্দে কমছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দ করা অর্থের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি এবং দেশীয় অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট প্রকল্প সংখ্যা ১০৭টি। এসব প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। মূল এডিপি থেকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দ আলাদা করা হয়।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে তিন হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে। এছাড়া চলমান উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৫৬৭ কোটি টাকা। তবে প্রায় দ্বিগুণ ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পে।
এছাড়াও এডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এখান থেকে চূড়ান্ত এডিপিতে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিন হাজার ৫৯০ কোটি টাকা কমছে। মেট্রোরেল প্রকল্পে এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চূড়ান্ত বা আরএডিপিতে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। ফলে ৫৬৭ কোটি টাকা কমছে।
তবে বরাদ্দ ঠিক থাকছে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে। এ প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
এডিপিতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের কাজ এগিয়ে নিতে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় বাড়ছে। প্রায় হাজার কোটি টাকা বাড়ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে। এ প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
সাসেক (সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) সড়ক সংযোগ প্রকল্প
এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা হচ্ছে। বরাদ্দ কমছে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও। এডিপিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এখান থেকে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়। ফলে বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্পে সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে। এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ফলে ঢাকা-সিলেট ফোরলেনে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৭৫ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক দিয়ে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষায় ২০ হাজার ৮২৪ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৫ হাজার ৫২০ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ৯ হাজার ৮৪ কোটি, কৃষিতে ৭ হাজার ২৭৯ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।