৩১ বছরে ৬৪১ নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত ৩৮৮১ জন

 

সুমন ইসলাম

অদক্ষ নাবিক ও ফিটনেসবিহীন নৌযান এবং নকশা বহিঃর্ভুত নির্মানের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রীরা। গত ৩১ বছরে ৬৪১ টি নৌদুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৮৮১ জন নৌযাত্রী। একি সময়ে আহত হয়েছেন ৭০৫ জন, নিখোঁজ রয়েছেন ৫০৪ জন। তবে নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও এখনও দেশের সকল নৌযানের ডাটাবেজ তৈরি করতে পারেনি নৌ মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে সারাদেশের নৌপথের যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তায় সচেতনতার জন্য চলছে নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ। এবছর প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রশিক্ষিত জনবল ও নিরাপদ জলযান, নৌ নিরাপত্তায় রাখবে অবদান’। আজ রোববার চলছে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের ৪র্থ দিন।

নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত নৌযানের সংখ্যা মাত্র ১৫ হাজার। যদিও এর বাইরে ছোট-বড় অসংখ্য যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী অনিবন্ধিত নৌযান সারাদেশে চলাচল করে। অনিবন্ধিত হওয়ায় সরকার এসব নৌযান থেকে রাজস্ব পায় না। আবার ফিটনেস ছাড়া চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণহানি বাড়ছে। কিন্তু অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

নৌ পরিবহণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর এজেড এম জালাল উদ্দিন বলেন, সরকারের নানা প্রচেষ্টায় নৌদুর্ঘটনা অনেক কমেছে। বর্তমানে আমরা আমাদের ডিজাইন বা নকমার পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি ছোট নৌযানের পরিবর্তে বড় নৌযান তৈরিরর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নাকশায় ও ডিজিটাইজেশনের সমন্বয় করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে নৌযানের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এজন্য দেশের সকল ইঞ্জিনচালিত নৌযানের তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ‘নৌযানের ডেটাবেজ তৈরি ও নৌযান ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়ানো’ শিরোনামে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করে সেটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে ইঞ্জিনচালিত নৌযানের তালিকা তৈরির জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়নি। কমিশন থেকে বলা হয়েছে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে নৌযানের তথ্য সংগ্রহ করতে। তবে পরিসংখ্যা ব্যুরো জনসংখ্যা শুমারি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।’ তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের পর পরিসংখ্যান ব্যুরোর সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

বেসরকারি তথ্যমতে, নৌযানে ত্রুটিপূর্ণ নকশা প্রণয়ন ও অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদিত নকশা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে নৌযান নির্মাণ, অবকাঠামোগত ও যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস প্রদান, অদক্ষ মাস্টার ও ড্রাইভার দিয়ে নৌযান পরিচালনা, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই করে অবৈধ নৌযান চলাচল, আবহাওয়ার পূর্বাভাষ যথাযথভাবে অনুসরণ না করাসহ ১০টি কারণে নৌ দুর্ঘটনা ঘটে।

নৌপরিবহন অধিদফতর সূত্রে জানাগেছ, ২০০৩ সালে ৩২ টি নৌ দুর্ঘটনায় সর্বধিক নৌযাত্রী মারা গেছেন৪৬৪ জন, ২০০০ সালে ৯ টি দুর্ঘটনায় মারা গেচেন ৩৫৩ জন, ২০০২ সালে ২৯৭, ২০০৯ সালে ৩৪ টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৬০ জন২০১৪ সালে১৬৩ জন, ২০২১ সালে ৩৯ টি নৌ দুঘর্টনায় মারা গেছেন ১৪৬ জন।

নৌ দুর্ঘটনার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মামলা করে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর। গত দুই যুগে ৩১০টি মামলা করা হয়েছে। ২০০১ সালে সবচেয়ে বেশি মামলা হয় ২৯টি। এর মধ্যে ২২টি মামলায় শাস্তি হয়। বাকি ৭টি মামলা খারিজ হয়। ২০০২ সালে মামলা হয় ২৩টি, যার মধ্যে ১৯টিতে শাস্তি হয়। ২০০৩ সালে ২১টির মামলার মধ্যে ১৬টিতে ও ২০০৫ সালে ২০টির মধ্যে ১৮টিতে দায়ীদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩ বছরের কারাদ- দেয়ার বিধান রয়েছে মেরিন কোর্টে। তবে আবার আপিল বিভাগে গিয়ে স্থগিত করে নিয়ে আসে আসামিরা।