দেশের নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- ভর্তি বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, অস্তিত্বহীন ক্যাম্পাস, সনদ বিক্রি, প্রতারণা, মানিলন্ডারিং, শিক্ষককে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ
নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি
ইউজিসি সূত্র জানায়, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় নর্থ-সাউথের বিরুদ্ধে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্রকে। আর সদস্য সচিব হলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মাহমুদুল আলম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ কমিটিকে ১৬ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রোগ্রামে অনুমোদিত আসন সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ১ আগস্ট ইউজিসি থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
লিডিং ইউনিভার্সিটি
সিলেটে অবস্থিত লিডিং ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েকজন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে অবৈধভাবে ৪৭ কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করেছেন।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ২৪ আগস্ট চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এরই মধ্যে তদন্তকাজ শেষ হয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাইম এশিয়া
এদিকে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির সাবেক বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এম এ খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ২৩৭ কোটি সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের। বিষয়টির তদন্ত করছে চার সদস্যের একটি কমিটি। গত বছরের ১৪ নভেম্বর এ বিষয়ে কমিটি গঠন করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা আটকে আছে বলে জানা যায়।
আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি
‘আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া, ইউএসএ’ নামে ভুয়া স্ট্যাডি সেন্টার ও ওয়েবসাইট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অথচ এর কোনো অস্তিত্বই নেই। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ১৮ মার্চ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যদের সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া
গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার বিরুদ্ধে। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারসহ জাল সনদ বিক্রি, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ অর্জনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। গত ১৪ এপ্রিল এ কমিটি করা হলেও তারা এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ১০ শিক্ষককে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করা হয়। এ কারণে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে তা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এটি সিলেটে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আর্থিক, প্রশাসনিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৮ মে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা।
দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার বিরুদ্ধে জাল সনদ বিক্রি, কমিশনের অনুমতি ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, অনুমোদনহীন ক্যাম্পাস পরিচালনা, প্রতারণা ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছে। এটি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ইউসিজি।
গত ১৯ মে এ কমিটি গঠন করা হলেও এখনো তদন্ত কাজ শেষ হয়নি বলে জানা যায়। অভিযোগের বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো খতিয়ে দেখতে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।