।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
শ্রম আইনের সংশোধনী গত অক্টোবর মাসে জাতীয় সংসদে পাস হয়। ১৪ নভেম্বর ২০১৮ সংশোধিত আইনটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে সরকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চাপে বিদ্যমান শ্রম আইনে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। এসব সংশোধনীকে ঘিরে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মালিকরা বলছে, এগুলো অতিরিক্ত চাপ। আর শ্রমিকদের অভিযোগ হলো, এই সংশোধনীতেও তাদের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটেনি। কেন এমন ভাবনা, কী আছে সংশোধিত গেজেটে?
আইনের সংশোধনীতে ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন ও শ্রমিক ধর্মঘট আহ্বানের শর্ত শিথিল, শ্রমিকের অসদাচরণের শাস্তি কমানো, ক্ষতিপূরণের হার দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগত। সংশোধিত আইনে সেটি কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো কারখানায় ৫ হাজার শ্রমিক থাকলে অন্তত ১ হাজার শ্রমিকের সম্মতি ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন পাবে না। আরও বলা হয়েছে, শিল্পকারখানার ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তহবিল করতে পারে। তবে দেশি বা বিদেশি অন্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সরকারকে আগেভাগেই অবহিত করতে হবে।
আইনের সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনপ্রক্রিয়া চলমান বা নিবন্ধনের পর সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কারখানার মালিক কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিলে সেটি ‘অ্যান্টি-ট্রেড ইউনিয়ন ডিসক্রিমিনেশন’ হিসেবে গণ্য হবে। সে জন্য মালিককে ১ বছর কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। বিদ্যমান আইনে শাস্তি ২ বছর ছিল।
বিদ্যমান আইনে বেআইনি ধর্মঘটে অংশ নিলে সাজা ছিল ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড, যা সংশোধনীতে কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। আবার কোনো শ্রমিক একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে সাজা ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ড থেকে কমিয়ে সংশোধনীতে ১ মাস করা হয়েছে।
বাড়ানো হয়েছে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ। এখনকার আইনে শিল্প দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লাখ ও সম্পূর্ণ অক্ষমতার জন্য শ্রমিকেরা ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পান। সংশোধনীতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ২ লাখ ও সম্পূর্ণ অক্ষমতার জন্য শ্রমিকদের আড়াই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন মালিকেরা।
এখনকার আইনে শ্রম আদালতের মামলা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির কথা বলা আছে। তবে বাস্তবে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগে। সে জন্য সংশোধিত আইনে ৬০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে যথাযথ কারণ দেখিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিদ্যমান আইনে শিল্পকারখানায় কোনো দাবি আদায়ে ধর্মঘট আহ্বানের জন্য দুই–তৃতীয়াংশ শ্রমিকের মতামত দরকার হয়। তবে সংশোধনীতে সেটি কমিয়ে ৫১ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য সরকার আলাদা কেন্দ্রীয় তহবিল করলে সেই খাতের শ্রমিকদের জন্য গ্রুপ বিমার প্রয়োজন নেই। এসব ক্ষেত্রে গ্রুপ বিমার অর্থ তহবিল থেকে দেওয়া হবে।