।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
পণ্য কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিকারের জন্য ভোক্তারা ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র : কল সেন্টার’-এ অভিযোগ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির নভেম্বর মাসের প্রতিবেদন বলছে, ভোক্তারা বেশি অভিযোগ করছেন অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণার বিরুদ্ধে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কয়েকজন ভোক্তা অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
যেরকম পণ্যের ছবি দেখে অর্ডার করেছেন, তেমন পণ্য পাঠানো হচ্ছে না, এ ধরনের অভিযোগ এসেছে মোবাইল সেট, ব্লেজার, শাড়ি প্রভৃতি পণ্যের বিষয়ে। ভোক্তাদের অভিযোগ, মানসম্পন্ন ও বেশি দামের পণ্য দেখিয়ে পাঠানো হচ্ছে নিম্নমানের পণ্য। অনলাইনের জনপ্রিয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’-এর বিরুদ্ধে এসেছে পণ্য প্রতারণার একাধিক অভিযোগ।
রাজধানী ঢাকার পান্থপথে ১ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে কল সেন্টারের কার্যক্রম। এক মাসে সেখানে কল সেন্টারে মোট ফোন এসেছে ২২৭টি। ই মেইল এসেছে ৮৭টি। সরাসরি অফিসে এসে অভিযোগ করেছেন মোট ১০জন। প্রত্যেক ভোক্তাকেই তথ্য ও পরামর্শভিত্তিক প্রাথমিক সেবা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতীত এই মাসে কল সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে মোট ২৪ দিন।
নভেম্বর মাসে ভোক্তাদের উত্থাপিত নানা বিষয় থেকে বাছাই করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মোট ৩৭টি। এসব অভিযোগ এখন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। নিয়ম অনুযায়ী কল সেন্টারের পক্ষ থেকে ভোক্তাকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর অভিযোগের অবস্থা জানিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ভোক্তা অভিযোগের বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য সরবরাহ করা হয়। এ ধরনের সেবা পেয়েছেন মোট ৩৫ জন ভোক্তা।
কল সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ আসছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, ‘ডাচ-বাংলা ফুড এন্ড বেভারেজ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিলারশিপ গ্রহণ করেন। বিধি অনুযায়ী তিনি ওই কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কেনেন। কিন্তু পণ্য হাতে পাওয়ার পর দেখতে পান, এসব পণ্য সরকার অনুমোদিত নয়। পণ্যগুলো ফেরত দিতে চাইলেও তারা নিচ্ছে না। এ ধরনের পণ্য তিনি বিক্রিও করতে চাচ্ছেন না, তাতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক দিন ধরে কোম্পানির লোকদের পেছনে ঘোরাঘুরি করে কোনো সমাধান পাননি। ফলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক চাপ ও মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন তিনি।
ঢাকার একজন ভোক্তা অভিযোগ এনেছেন অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সার্ভিস পাঠাও-এর বিরুদ্ধে। অভিযোগে তিনি লিখেছেন, প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতার চেয়ে কারসাজিতে আস্থা বেশি। তারা ভোক্তাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ও ব্যবসা প্রসারের জন্য ছাড় দিয়ে থাকে। কিন্তু ৬০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা উল্লেখ থাকলেও ১০০ টাকার ভাড়ায় ৬০ টাকা ছাড় পাওয়া যায় না, দেয়া হয় ৩০-৪০ টাকা। এটা প্রতারণা, এটা কারসাজি, এতে ভোক্তা হিসেবে আমি বিভ্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আরও অনেকে হচ্ছেন। তাছাড়া তাদের ভাড়ার হারও একেক সময় একেক রকম দেখায়, যদিও গন্তব্য থাকে একই। এসব নিয়ে সম্প্রতি পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। অনেক ভোক্তাই তাদের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
পুরান ঢাকার একজন অধিবাসী অভিযোগ এনেছেন ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে বলা হয়েছিল ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাগবে, কিন্তু রোগীর ছাড়পত্র দেয়ার সময় ৬৫ হাজার টাকার বিল দেওয়া হয় এবং তিনি তা পরিশোধ করেন। তিনি হাসপাতালটির সুনির্দিষ্ট কিছু সেবার ক্ষেত্রে বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ এনেছেন।
ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক অরুণিমা ইসলাম বলেন, ‘১ নভেম্বর থেকেকার্যক্রম শুরু হলেও এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি সাড়া জাগিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোক্তারা কল সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরাও তাদের সহায়তা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অভিযোগ করে ভোক্তারা যে সেবা পাচ্ছেন, এই তথ্য জনগণের মধ্যে আরও বেশি করে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। মানুষ তাহলে সাহস পাবে, কী অভিযোগ পাঠানো যায়, তারা জানতে পারবে। যত বেশি প্রচার হবে তত বেশি সচেতনতা বাড়বে। মানুষ সচেতন হলে এই খাতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতাও হ্রাস পাবে।’
তিনি আরও জানান, ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র : কল সেন্টার বাংলাদেশের ভোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ভোক্তারা কোনো পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হলে এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। ফোন, ই মেইল, চিঠি কিংবা সরাসরি হাজির হয়ে অভিযোগ দায়ের করা যায়। ০১৯৭৭০০৮০৭১, ০১৯৭৭০০৮০৭২ নম্বরে বা [email protected] ইমেইলে অভিযোগ পাঠানো যাবে। কল সেন্টার থেকে এসব অভিযোগ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। অধিদপ্তরে অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে থাকেন। এর মাধ্যমে ভোক্তা প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পেয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগও রয়েছে।’