ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রমজানে বেশি চাহিদা থাকা পণ্যের মধ্যে অন্যতম চিনি। সপ্তাহ তিনেক পর শুরু হতে যাওয়া রোজায় চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। তবে এর কোনো প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মণে ২৫-৩০ টাকা কমলেও খুচরায় কিনতে হচ্ছে সেই বাড়তি দামেই। কিছুদিন আগে থেকে বাড়তে থাকা রমজানের আরেক অপরিহার্য পণ্য ছোলার দাম কমেছে। আদা, পেঁয়াজের দামেও এসেছে কিছুটা স্বস্তি। তবে বাড়তি সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম।
এদিকে চিনির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও খাতুনগঞ্জের বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। রমজান সামনে রেখে বাজারে চিনির মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্রে চিনির আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
আমদানিশুল্ক প্রত্যাহারের আগে প্রতি টন পরিশোধিত চিনিতে আমদানি শুল্ক ছিল ছয় হাজার টাকা, অপরিশোধিত চিনিতে ছিল তিন হাজার টাকা। নতুন পরিপত্রে ওই শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাছাড়া অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে যেখানে ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ছিল, বর্তমানে সেই শুল্কহার করা হয়েছে ২৫ শতাংশ।
রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, নতুন পরিপত্রে অপরিশোধিত প্রতি কেজি চিনির ওপর থেকে শুল্ক ৭ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে ১০ টাকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই শুল্ক ছাড় আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১১২ টাকা এবং খোলা চিনির দাম ১০৭ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু বাজারে খোলা চিনি ১১০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক মাস ধরে এ দরে চিক্রি বিক্রি হয়ে আসছে। তবে গত এক বছর আগে এ চিনি বিক্রি হয়েছিল ৭৫-৮০ টাকায়।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এস আলমের চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৩৯২০-৩৯২৫ টাকায়। তবে সিটি গ্রুপের চিনি ৩৯৬০-৩৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, দুদিনের ব্যবধানে প্রতিমণ চিনিতে ২৫-৩০ টাকা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি।
খাতুনগঞ্জের বাজারে এস আলম, টিকে, মেঘনা ও সিটি গ্রুপের ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে। রমজান সামনে রেখে ভোজ্যতেলের দামও কিছুটা বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি মণে বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। খাতুনগঞ্জে এস আলম গ্রুপের ভোজ্যতেল দুই ভাবে বিক্রি হয়। একটি ১৫ দিন পর ডেলিভারি, অন্যটি সরাসরি ডেলিভারি। দুটিতে প্রতিমণে ৭০-৮০ টাকা ব্যবধান থাকে।
মঙ্গলবার দুপুরে খাতুনগঞ্জে এস আলম গ্রুপের পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ৪৭৬০- ৪৭৭০ টাকায়। এসব তেল সরাসরি মিল থেকে সরবরাহ পাওয়া যাবে। তবে ১৫ দিন পরে সরবরাহ পাওয়া যাবে এমন ডিও বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৪৬৯০ টাকায়। তাছাড়া টিকে ও সিটি গ্রুপের পাম অয়েল সরাসরি ডেলিভারি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের পাম অয়েল ৪৭৮০ টাকায় এবং সিটি গ্রুপের পাম অয়েল ৪৮১০-৪৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন। সরাসরি মিল গেট থেকে ডেলিভারি পাওয়া যাবে এমন সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬৫৩৫ টাকা মণ হিসেবে। দরে সব ব্র্যান্ডের সয়াবিন একই মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
রমজানের খাদ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ছোলার। রমজান ঘনিয়ে এলেও ছোলার দাম পড়তির দিকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারক ব্যবসায়ী ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, এখন বাজারে প্রচুর পরিমাণে ছোলা রয়েছে। সে অনুযায়ী খাতুনগঞ্জে ক্রেতা নেই। এতে ছোলা ও ডালের দাম কমতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বাজারে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ভারতীয় ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৩৩০০ টাকায়। ৩০০০ টাকাতেও ভারতীয় ছোলা পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ থেকে ২৮০০ টাকায়। তানজানিয়ার ছোলা বাজারে কমলেও বর্তমানে ২৯০০ থেকে ২৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানি করা মসুর ডালের দাম এক মাস আগে ৯০ টাকা থাকলেও বর্তমানে কমে ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জে এখন কোনো পণ্যের সংকট নেই। রমজান সামনে রেখে পর্যাপ্ত পণ্য মজুত রয়েছে। তবে বড় আমদানিকারক ও মিলাররা বাজারে চিনি না ছাড়লে দাম কমবে না। এতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করলেও ভোক্তারা সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন। এজন্য মিলার পর্যায়ে সরকারি তদারকি বাড়ানো জরুরি।
খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের বাজারে পেঁয়াজ-রসুনের দামও পড়তির দিকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আদার দামে অস্থিতিশীলতা থাকলেও সম্প্রতি মিয়ানমারের আদার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় সে অস্থিরতাও কেটে গেছে।