ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: নতুন করে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও সরকারের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে আগের দামেই চিনি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি।
ট্যারিফ কমিশন গত ২২ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে চিনির দাম বেঁধে দেওয়ার কথা জানায়। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ৮৪ টাকা ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত খোলা চিনির দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
নতুন দামের চিনি খুচরা বাজারে আসতে সপ্তাহখানেক সময় লাগার কথা। তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় বাজারে কিছুটা কম দামে প্রতি কেজি ৮৮ টাকায় পাওয়া যায়। প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি দরে।
ফলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজি চিনিতে ক্রেতাদের বেশি দিতে হচ্ছে চার থেকে ছয় টাকা।
বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) হিসাবে, ঢাকার বাজারে চিনির দাম প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯২ টাকা। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর কেজিপ্রতি আরও দুই টাকা বেড়েছে।
সরকার নির্ধারিত দর না মেনে চিনি উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সমিতি বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে নতুন করে দাম নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছে। তারা বলছে, সরকার যে দর নির্ধারণ করেছে, সেই দামে চিনি বিক্রি করলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকেও (বিটিটিসি)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এ সংস্থা দর পর্যালোচনা করে। কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আখতার বলেন, চিনি বিপণনকারীদের আবেদন তাঁরা পেয়েছেন। আবেদনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজার টনের মতো দেশীয় আখ থেকে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়। দেশীয় কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গত ১১ আগস্ট চিনির দাম নির্ধারণের জন্য আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ সেপ্টেম্বর সভা হয়। এতে ডলারের দাম কত ধরা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে চিনির দামও নির্ধারণ করা হয়নি।
চিনি বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, যে দামটি জানানো হয়েছে, তা যথাযথ হয়নি বলে নতুন করে আবেদন করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত এপ্রিল-জুন সময়ে বিশ্ববাজারে চিনির দাম ছিল প্রতি টন ৪৩০ মার্কিন ডলার, যা গত সেপ্টেম্বরে ৩৯০ ডলারে নামে। বিপরীতে এ সময়ে বাংলাদেশে দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সময়ে দেশে ডলারের দাম অনেকটাই বেড়েছে। এ কারণে আমদানিতে বাড়তি খরচ পড়ছে।
শুধু চিনি নয়, নির্ধারিত দর মানা হচ্ছে না তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপিজি) গ্যাসের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যে দর ঘোষণা করে তার চেয়ে সিলিন্ডারপ্রতি (১২ কেজি) ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয় ক্রেতাদের।
এরই মধ্যে সিমেন্ট ও রডের দাম নির্ধারণ নিয়ে কাজ করছে ট্যারিফ কমিশন।
চিনির দামের বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এলপিজির বাড়তি দাম নেওয়ার বিষয়ে ভোক্তার অভিযোগ পেলে বিইআরসি ব্যবস্থা নেবে, সংস্থাটির এমন অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রহমান বলেন, এটা দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল।