ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আলু, টমেটো, বেগুন, পটল, শসা, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, বরবটি, লেবু, ঢেঁড়স, করলাসহ যাবতীয় সবজির দাম ১০ টাকা। এর বাইরে মিলবে ফল বা শাক। বলা হচ্ছে পুরান ঢাকার শ্যামবাজার এলাকার কচুপট্টি বাজারের কথা। স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজারটি।
মূলত কুড়িয়ে আনা সবজি ও জিনিসপত্র বিক্রি হয় এখানে। আর তাই বাজারটির অধিকাংশ ক্রেতাই নিম্নবিত্ত।
কেউ রিকশা চালান, কেউ চালান নৌকা। কেউবা দিনমজুরের কাজ করে দিনশেষে ঢুঁ মারেন এই বাজারে। নিম্ন-মধ্যবিত্তদেরও মাঝে মাঝে দেখা যায় এ বাজারে।
সকাল-বিকাল সবসময়ই খোলা কচুপট্টি বাজার। সরেজমিনে দেখা গেলো, বিক্রেতাদের বেশিরভাগই নারী।
সাইদুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পরিবার নিয়ে ঢাকায় বাস করছি। পাশেই একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। যা বেতন পাই তা দিয়ে ঘর ভাড়া আর ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ হয়ে যায়। সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই এখান থেকেই শাক-সবজি কিনি। এখানকার বেশিরভাগ সবজি একটু বাসি হয়। তবে কম দামে পাই।
মরিয়ম তার দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে থাকেন নদীর ওপারে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্যামবাজারে আসা সবজি ও ফলের ট্রাকগুলোর আশেপাশেই থাকেন। মালামাল আনা নেওয়ার সময় বস্তা থেকে পড়ে যাওয়া সবজি কুড়ান। সেটা বিক্রি করেই চলে তার সংসার।
মরিয়ম বললেন, গত ২৩ বছর একাই সংসার চালাচ্ছি। আগে মানুষের ঘরে ঘরে কাজ করতাম। করোনার সময় সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই কাজ শুরু করি। দিনে দুই-তিনশ টাকার বেচতে পারি।
সীমা নামের আরেক বিক্রেতা জানালেন, কচুপট্টির পাশে কুড়িয়ে আনা মালপত্র বিক্রি হয়। এটা সবাই জানে। অনেক মানুষ এখান থেকে বাজার করে। এটাকে কেউ ১০ টাকার বাজার বলে, কেউ বলে টোকাই বাজার। ভালো সবজি থাকলে মাঝে মধ্যে দাম একটু বেশি থাকে। যেমন বাজারে যে টমেটো ১০০ টাকা, এখানে সেটার ভাগ ১০ টাকা। আবার ভালো চেহারা হলে দাম সামান্য বেশিও হয়।
সীমা জানালেন, তার স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্ত। গত আট বছর ধরে কুড়ানো সবজি বিক্রি করে তিনি দুই সন্তানের সংসার চালাচ্ছেন।
বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া জানান, এখানে যারা বিক্রি করে তাদের অনেকে আবার আড়তেও কাজ করে। তবে এখানে কেজি ধরে বিক্রি হয় না। ভাগ হিসেবে বিক্রি হয়। যা নেবেন দশ টাকা। যে সময় যেটার সিজন সেটাই পাওয়া যাবে।