ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ঈদের সকালে সেমাই কিংবা নামাজ থেকে ফিরে জর্দা-পোলাও- যাই খান না কেন এবার গুনতে হবে বাড়তি খরচ। সেমাই প্রস্তুতের প্রধান উপকরণ চিনি ও দুধের দাম বেড়েছে মাস দুয়েক আগেই। একই সঙ্গে ফিরনি, পোলাও রান্নার সব ধরনের সুগন্ধি চালের দামও বছরজুড়ে বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও বাজারের তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এসব পণ্যের দাম এবার বেশি গুনতে হবে ২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে জানা যায়, গত বছর ২০০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন কোম্পানির সেমাইয়ের প্যাকেটের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। যা এবছর ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত ঘিয়ে ভাজা সেমাইয়ের দাম ৯০-১০০ টাকা। যা আগে ২০ টাকা কম ছিল।
শুধু ব্র্যান্ডের নয়, একইভাবে খোলা সাদা সেমাইয়ের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৪০-৫০ টাকা বাড়তি দেখা গেছে। গত বছর নন-ব্র্যান্ডের খোলা লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছিল। এবার সেই লাচ্ছার মূল্য ধরা হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা।
বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি হওয়া লাচ্ছা ২০০-২৪০ টাকার জায়গায় এবার পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকায়। গত বছর ঘিয়ে ভাজা যে লাচ্ছা মানভেদে ৪০০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই একই লাচ্ছা ৮০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেমাই ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। সেমাই তৈরির জন্য ব্যবহৃত ময়দা, তেলসহ অন্য উপকরণের দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সেমাইয়ের দামে।
বছরের ব্যবধানে এবার প্রতি কেজি চিনির জন্য গুনতে হবে ৩৭ থেকে ৫০ টাকা বেশি। চিনির দামের বিষয়ে খোঁজ নিতে রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ ও খিলগাঁও তালতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১৩০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি ব্র্যান্ডভেদে ১২০-১৪০ টাকা এবং দেশি মিলগুলোর আখের চিনি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চিনির দাম বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, টিসিবির তথ্যেও। সংস্থাটির হিসাবে, গত বছর প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮-৮০ টাকা।
সারা বছর দফায় দফায় বাজারে গুঁড়া দুধের দাম বেড়ে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, বিদেশি ব্র্যান্ডের এক কেজি গুঁড়া দুধের দাম দাঁড়িয়েছে ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকা। আর দেশি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮২০ টাকার আশপাশে।
দুধের দামের যে তথ্য টিসিবি দিচ্ছে তাতে দেখা যায়, গত এক বছরে দুধের দাম ২২ থেকে ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর বিদেশি ব্র্যান্ডের দুধ ৬৬০ থেকে ৭২০ টাকা ও দেশি ব্র্যান্ডেরগুলো ৬০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়েছে।
এর প্রভাবে বাজারে প্যাকেটজাত তরল ও সাধারণ গরুর দুধের দামও চড়া। বাজারে পাস্তুরিত তরল দুধের লিটার এখন ৮৫ থেকে ১০০ টাকা, যা গত বছর ৬০-৭০ টাকার মধ্যে ছিল। বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা গরুর দুধের দাম বেড়ে ১০০ টাকায় ঠেকেছে।
এছাড়া রোজার আগেই বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলা, বাদাম ও কিশমিশের দাম। একই সঙ্গে পোলাও-বিরিয়ানির জন্য ব্যবহৃত সুগন্ধি চালের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত এক বছরে কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত। গত বছর ঈদে যে চালের কেজি ১১০-১১৫ টাকা ছিল, এবার সেই একই চাল কিনতে গুনতে হবে ১৬০-১৭০ টাকা।