ভেজাল খাদ্যে প্রাণনাশ

খাদ্য মানুষের অন্যতম প্রধান মৌলিক অধিকার। খাদ্য গ্রহণ ছাড়া মানুষসহ কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে সে খাবার অবশ্যই হতে হয় বিশুদ্ধ। দূষিত বা ভেজালমিশ্রিত খাদ্য মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে থাকে।

অথচ আজকের বাংলাদেশে সেই বিশুদ্ধ খাবার খুঁজে পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। বাজার থেকে কেনা কোনো খাদ্যই যেন আর বিশুদ্ধ নেই। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া দূষিত খাদ্য গ্রহণজনিত কারণে ৫ বছরের কম বয়সের আক্রান্ত হওয়া ৪৩ শতাংশ শিশুর মধ্যে মৃত্যুবরণ করে ১ লাখ ২৫ হাজার।

পরিবেশ বাঁচাও অন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতি বছর দেশে ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে, ২ লাখ লোক কিডনি রোগে, দেড় লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ছাড়া গর্ভবতী মা ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মদান করেন। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভার ও ফুসফুস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। ২০১৫ সালে দিনাজপুরে কীটনাশকমিশ্রিত লিচুর বিষক্রিয়ার ৮ এবং ২০১২ সালে ১৪ জন শিশুর প্রাণহানি ঘটে।

বিষাক্ত প্যারাসিটামল খেয়েও শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিষাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে ১৪ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ২০০৯ সালে ধামরাইয়ে ৩ শিশু মারা যায় বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেশের অনিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। পোলট্রি ফার্মের ডিমে ট্যানারি বর্জ্যরে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। আটায় মেশানো হচ্ছে চক পাউডার বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট। আনারসে হরমোন প্রয়োগ করে দ্রুত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলে আসছে বহুকাল ধরে। আম গাছে মুকুল ধরা থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে রাসায়নিক ব্যবহার এখন ওপেন সিক্রেট। মিষ্টিজাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত রং, সোডা, স্যাকারিন ও মোম।

কাপড়ের বিষাক্ত রং, ইট ও কাঠের গুঁড়া মেশানো হয় খাবারের মশলায়। তেল, আটা, চিনি, কেক, বিস্কুট কিছুই আজ ভেজালমুক্ত নয়। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছে ফরমালিন মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। শাকসবজিতে বিষাক্ত স্প্রে, সব ধরনের ফলমূল দ্রুত পাকিয়ে রঙিন বানাতে সর্বত্র কার্বাইড, ইথোফেন, আর পচন রোধে ফরমালিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। নকল ও ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গেছে বাজার। এসব প্রতিরোধ করা জরুরি।