ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চালকল মালিকদের (মিলার) হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তারা যদি চালের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কষ্ট কিংবা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায় তাহলে কঠোর হবে সরকার। এ ক্ষেত্রে মিলারদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, তাহলে আমাদের মতো খারাপ লোক কিন্তু আর কেউ হবে না।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন না আটটি রাইস মিল করার জন্য ডেনমার্ক আমাদের দেশে এসেছে। তাদের শুধু জমি দিতে হবে। তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করতে হবে, তারা যে উৎপাদন করবে এর ৫০ শতাংশ চাল সরকারকে দেবে। সরকারি রেটেই চাল দেবে তারা। পুরো অর্থায়ন তাদের। এ আটটি মিল হলে আমাদের এতগুলো মিল মারা পড়ে যাবে।
চালকল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা এগুলো নীরবে করছি, কিন্তু আপনারা নীরবে দামও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আপনারা নীরবে রাতারাতি দাম বাড়াচ্ছেন। আপনারা প্রতিজ্ঞা করেন ভোক্তাদের কষ্ট দেবেন না।
মিল মালিকদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নিজেদের আল্লাহর নামে সঁপে দিয়ে, নিজের অর্থ ব্যয় করে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন, সেই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে কৃষকদের বাঁচাতে হবে, ভোক্তাদের বাঁচাতে হবে, দোয়া নিতে হবে। সেই দোয়া নিয়ে এগিয়ে যান। আপনারা আমাদের সহযোগিতা পাবেন। আর যদি ভোক্তাদের পেটে কষ্ট দিতে চান, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চান, তাহলে আমাদের মতো খারাপ লোক কিন্তু আর কেউ হবে না।
মিল মালিকরা কী দামে চাল বিক্রি করে তা তারা ছাড়া কেউ জানে না উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সাংবাদিক কিংবা খুচরা বিক্রেতারা বলেন মিলগেটে দাম বেশি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আপনাদের প্রতিবাদ করতে দেখিনি। তাহলে কী আমরা ধরে নিতে পারি তারা যেটা বলে সেটা ঠিক।
তিনি বলেন, আমরা আশ্চর্য হয়েছি যে, তেলের দাম বাড়লো। সবকিছু মিলিয়ে কেজিতে চালের দাম এক টাকা বাড়তে পারে। আর সেখানে এক রাতে যদি ৫-১০ টাকা বেড়ে যায় এটা কিন্তু কাম্য নয়।
মিল মালিকদের তাদের সংগঠনের নামে একটি ওয়েবসাইট খোলা এবং সেখানে প্রতিদিন কী দামে চাল বিক্রি হচ্ছে সেই তথ্য তুলে ধরারও অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বোরোর সময়ে চুক্তি করে যারা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারেননি তারা যদি যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেন তাহলে বিবেচনা করা হবে। তবে চাল প্রকিউরমেন্টে সরকারকে সহায়তাকারী আর অসহায়তাকারী মিল মালিককে সমানভাবে পরিমাপ করা হবে না।
সরকারি ধান-চাল সংগ্রহে কম দাম দেওয়া হয় এমন বক্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ১১টি মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দাম নির্ধারণ হয় এবং সেটা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে করা হয়।
বোরো সংগ্রহে ধান-চালের দাম সঠিক ছিল উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সে কারণে কৃষক ন্যায্যমূল্য পেয়েছে প্রকিউরমেন্টও শতভাগ বেশি হয়েছে। আমন সংগ্রহের সময়ে ডিজেল, সার ও বিদ্যুতের দাম বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
ধান ও চালের দাম নির্ধারণে মিলারদের প্রতিনিধি রাখার অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী।
খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, মিলারদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোক্তাদের কাছে জানিয়ে দিতে হবে যে মিলগেটে আজ কত টাকা দামে চাল বিক্রি হলো। তাহলে খুচরা বিক্রেতা যে দাম বাড়ানোর জন্য মিলারদের দোষ দেয় সেটা থেকে মিলাররা মুক্তি পাবে।
সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।