ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রাজধানীর রামপুরার উলুন রোডের মুখে সুলভ মূল্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি চলছে। সেখানে খুব বেশি ক্রেতা নেই। ২-৪ মিনিট পরপর দু-একজন আসছেন। কেউ নিচ্ছেন, অধিকাংশরা দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রামপুরার ওই বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে দাম শুনে খালি হাতে ফেরা মানুষদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের অনেকে বলেন, হাজারের বেশি টাকা ব্যয় করে দুধ, ডিম ও মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। প্রাণিসম্পদ এ ‘সুলভ’ দামে বিক্রি কার্যক্রমে যেটুকু কম দাম নেওয়া হচ্ছে সেটা নামে মাত্র। বাজারের পণ্যের মতই তাদের কাছে দুর্লভ মাংস খাওয়া।
সরেজমিনে একই অবস্থা দেখা গেছে নতুন বাজার এলাকায় বিক্রি কার্যক্রমের ফ্রিজিং ভ্যানের সামনেও। সেখানে আবার গরুর মাংসের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগি, আর খাশির মাংসের সঙ্গে দুধ, ডিম, অথবা শুধু দুধ আর ডিম এ তিন ধরনের প্যাকেজ আকারে পণ্য বিক্রি হওয়াতে অনেকেই কিনতে পারছেন না।
সেখানে ক্রেতা আকলিমা বানু বলেন, মাংস কম দামে দিলে কী হবে, এ দামে কেনার সামর্থ্য আমাদের মতো অনেকেরই নেই। এখানে এক কেজি মাংস ও মুরগির নিলে লাগবে হাজার টাকা।
আজাদ রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, এখানে মাংস ও ডিমের দাম শুধু কম নিচ্ছে। দুধ ও ব্রয়লার মুরগির দাম বাজারের থেকেও বেশি। কারণ প্রতি কেজি হাড় ছাড়া ব্রয়লার ৩৪০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা। বাজারে এর থেকে কম দামে এগুলো পাওয়া যায়।
এদিকে, ওই দুই বিক্রয় কেন্দ্রে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখা গেছে, শুধু ডিম বা গরুর মাংস এমন একটি পণ্য কিনতে আসছে কিছু ক্রেতা। তবে সব কিছুর সঙ্গে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। এর দাম বেশি হওয়াতে অনেকে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
আবার রামপুরা বিক্রয় কেন্দ্র আধাঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় খাশির মাংস। বিক্রয় কমকর্তা সাইদুর জানায়, মাত্র তিন কেজি খাশির মাংস বরাদ্দ পেয়েছেন তারা। যা আধা কেজি করে ছয়জনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার খামার বাড়ির প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে সুলভ মূল্যে এ দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। অনেক সময় প্রশ্ন ওঠে পণ্যগুলো দাম ও বরাদ্দ নিয়ে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে যে দাম ও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা চূড়ান্ত নয়। পরবর্তীতে চাহিদা ও যোগান দেখে কম-বেশি হতে পারে।
উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন সকালে রাজধানীর ২০টি স্থানের এ পণ্য কেনা-বেচা হচ্ছে। এর মধ্যে কোথাও চাহিদা কম, কোথাও বেশি। কোথায় আধা ঘণ্টায় পণ্য বিক্রি শেষ হচ্ছে, কোথাও চলছে দুপুর পর্যন্ত। গত তিন দিনে অনেক এলাকায় পণ্য কিনতে অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, পরে পণ্য না পেয়ে ফিরে যান খালি হাতে।
তবে সবখানে পণ্যের মূল্য নিয়ে উস্মা প্রকাশ করে ক্রেতারা। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৪০ টাকা, ড্রেসড (চামড়া ছাড়া) ব্রয়লার প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে এখানে। যা বাজারের তুলনায় খুব একটা সাশ্রয়ী নয়।
সাজ্জাদ নামের এক ক্রেতা বলেন, টিসিবি পণ্য বিক্রি করে প্রায় অর্ধেক দামে। ওএমএসেও চাল আটার দাম বাজারের তুলনায় অনেক কম থাকে। সেটাও তো সরকারি বিক্রি কার্যক্রম, তবে দাম কেন এতো বেশি। দাম একটু কম হলে সবাই খেতে পারতো।
নতুন বাজার বিক্রয় কেন্দ্রে আল আমিন বলেন, দাম কমিয়ে পণ্যের বরাদ্দ বাড়ালে সবাই কিনতে পারতেন। এখন অনেকে আসছে, দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন।
আবার স্বাধীনতা দিবসের ছুটির দিন তাই আজ ক্রেতা কম বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সেজেগুজে অল্প করে সবকিছু এনেছিলাম। অন্যদিন হলে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটেই সব বিক্রি হয়ে যেত। আগামীকাল থেকে বেশি করে পণ্য আনা হবে।
রামপুরার সাইদুল জানান, ৭৫ কেজি গরু, তিন কেজি খাসি, ৭০ কেজি মুরগি, ২০০ লিটার দুধ ও ১৫০০ পিস ডিম আনা হয়েছিল এ ভ্যানে।
এদিকে, যারা পণ্য পাচ্ছেন তারা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে তারাও বলছেন, এসব পণ্যের মূল্য আরেকটু কম হলে ভালো হতো।
মনির হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, খুব ভালো ভাবে পণ্য পেয়েছি। আশা করছি পণ্যগুলো ভালো হবে। তবে দাম আরও কম হলে সবাই কিনতে পারতেন।
সবখানে প্রথমে ক্রেতাকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হয়। এরপর সেই টিকিট দেখিয়ে ফ্রিজিং ভ্যান থেকে নির্দিষ্ট পণ্য নিতে হয়।
সৌজন্যে, জাগো নিউজ।