ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চালের বস্তায় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ ও জাত উল্লেখ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বস্তার গায়ে লেখা থাকবে মিলগেটে চালের দাম ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য। এতে ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা বাড়বে, ক্রেতাও লাভবান হবে। খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথ ভাবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে। আগামী রোজার ভেতরেই মূল্য উল্লেখ করা চালের বস্তা বাজারে পাওয়া যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। নিত্যপণ্যে সাধারণ মানুষ যাতে স্বস্তি পায় সে জন্য এবার নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে চালের বস্তায় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ ও দাম উল্লেখ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রবণতা কমবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২০ ফেব্রয়ারির মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় আউশ, আমন ও বোরো- তিন মৌসুমে কোন জেলায় কোন জাতের কী পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে তা খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব চালের বাস্তায় ধানের জাত, মূল্য ও চাল উৎপাদনের তারিখ উল্লেখ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চাল ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রপ্তানিকারকরা আগে থেকেই চালের বস্তায় মূল্য ও উৎপাদনের তারিখ উল্লেখ করেই চাল রপ্তানি করেন। এখন অভ্যন্তরীণ বাজারে এটি বাস্তবায়ন করা গেলে তা ভোক্তাদের জন্য উপকারী হবে। মজুত করে দাম বাড়ানোর প্রবণতা কমে আসবে।
মিল মালিকরা বলছেন, সরকার যদি চালের বস্তায় জাত, দাম ও উৎপাদনের তারিখ উল্লেখ করার উদ্যোগ নেয়, তা বাস্তবায়ন করতে মিল মালিকদের সমস্যা নেই। মিল মালিকরা এজন্য প্রস্তুত। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলেছেন, এতে খরচ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় আউশ, আমন ও বোরো- তিন মৌসুমে কোন জেলায় কোন জাতের কী পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে তা জানাবে। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় তথ্যগুলো খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। ধানের উৎপাদন খরচ কত এবং সর্বোচ্চ খুচরামূল্য কত তাও জানাবে মন্ত্রণালয়টি। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে খাদ্য মন্ত্রণালয় চালের বাজারদর নির্ধারণ করে দেবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘চালের বস্তায় মূল্য, জাত ও উৎপাদনের তারিখ উল্লেখ থাকতে হবে, আমরা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা তথ্য সংগ্রহ করবো। এর পরেই বাজারে মূল্য উল্লেখ করা চালের বস্তা পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি রোজার ভিতরেই মূল্য উল্লেখ করা চালের বস্তা বাজারে পাওয়া যাবে।’
চালের বস্তায় মূল্য উল্লেখ করার বিষয়টি কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ কাজটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একা করবে না। এর সঙ্গে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। তিন মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এবার উদ্যোগটি বাস্তবে রূপ নিতে পারে।
বাংলাদেশ রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বস্তার গায়ে চালের মূল্য, উৎপাদনের তারিখ ও জাত উল্লেখ করার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এটি বাস্তবায়ন করতে মিল মালিকদের কোনো সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন, ‘পাইকাররা স্টকে অনেকদিন রেখে দেয়। এখন বস্তায় চালের মূল্য ও উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকলে এটা রোধ করা সম্ভব হবে। আবার আমাদের ধান ও চালের গ্রেড আলাদা। সুতরাং, জাত উল্লেখ থাকলে এটাও রোধ করা সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আতিকুর রহমান খান পিন্টু বলেন, ‘মিল থেকে চালের বস্তায় জাত, দাম ও উৎপাদনের তারিখ উল্লেখ করা হলে আমাদের খরচ বেড়ে যাবে। তখন চালের দামও বাড়তে পারে।’
বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ইসকুল হুসাইন সুইট বলেন, ‘আমরা চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে আগে থেকেই বস্তার গায়ে মূল্য ও উৎপাদনের তারিখ লিখি। অন্য দেশেও আছে। আমাদের স্থানীয় বাজারে নেই। এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে এটি বাস্তবায়ন করা গেলে তা ভোক্তাদের জন্য সুবিধা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। মজুত করে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা কমে আসবে। বাজারে জবাবদিহিতা বাড়বে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানে এটা অনেক আগে থেকেই আছে। আমরা মনে হয় এটা ভোক্তার জন্য খুবই উপকারী হবে।’
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাইম মিয়া বলেন, ‘চালের বস্তায় মূল্য, জাত ও উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকলে ভালোই হবে। সবকিছুর একটা সিস্টেম থাকা উচিত। বাংলাদেশের কোনো কিছু সিস্টেমে নেই।
তিনি বলেন, ‘এটা করা গেলে কী দামে ধান কিনছে, কী দামে চাল কিনছে তার তথ্য থাকবে। তাহলে জবাবদিহিতা থাকবে। আমরা তো জবাবদিহিতা চাই। কেউ ১ টাকা থেকে ১০ টাকা লাভ করুক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই সীমিত লাভ করে মানুষ যেন ভালো ভাবে চলতে পারে।’ জাগো নিউজ।