চালের কেজিতে ৪-৮ টাকা বেড়েছে

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাজারে এসেছে বোরো মৌসুমের ধান-চাল। সরকারও বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ করছে। আমন মৌসুমের চালও রয়েছে বাজারে। উৎপাদন থেকে শুরু করে দেশের কোথাও ধান-চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই। এই ভরা মৌসুমেও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে মানভেদে ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চারশ টাকা পর্যন্ত।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কয়েকটি বড় শিল্পগ্রুপ থেকে শুরু করে মিলার পর্যায়ে ধানের বড় মজুত তৈরি করে সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর মিলাররা বলছেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যার প্রভাবে ধানের দাম বাড়ায় চালের বাজারে প্রভাব পড়েছে।

ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, সরকারের মন্ত্রীও চালের ব্যবসায় জড়িত। যে কারণে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। বাজারে সরকারি নজরদারিরও ঘাটতি রয়েছে।

চাক্তাই পাইকারি বাজারের বড় ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘এখন বোরো মৌসুমের চাল বাজারে এসেছে। বিগত বছরগুলোতে কখনো ভরা মৌসুমের এই সময় চালের দাম বাড়ে না। গত এক মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজি চালের দাম আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাইকারি আড়তগুলোতে চালের দাম বাড়ানো হয় না। উত্তরাঞ্চলের মিলাররা চালের দাম বাড়ালেই চট্টগ্রামে চালের দাম বাড়ে। কারণ চট্টগ্রামে বড় অংশের চাল আসে বাইরের জেলার মোকামগুলো থেকে। তাছাড়া বড় কয়েকটি শিল্পগ্রুপ বড় অংকের ধান মজুত করেছে। তাদের সঙ্গে মিলার পর্যায়ে সিন্ডিকেট কারসাজি করে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

চাক্তাইয়ের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে মোটা চাল হিসেবে পরিচিত ইরি কিংবা নূরজাহান স্বর্ণা সিদ্ধ চালের দাম মাসের ব্যবধানে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো বেড়েছে। এতে মাসের ব্যবধানে মোটা চলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ থেকে ৮ টাকা। এই চালের বড় অংশের ভোক্তা হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তরা।

সোমবার (১৫ জুন) বিকেলে চাক্তাইয়ের আড়তে কথা হয় মেসার্স সেকান্দার হোসেনের পরিচালক জাহেদুল ইসলাম শাওনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ নূরজাহান স্বর্ণা সিদ্ধ ৫০ কেজি চালের বস্তার দাম ২৮০০ টাকা। এক মাস আগেও এসব চাল ২৪শ টাকা ছিল। একইসঙ্গে ইরি আতপ ৫০ কেজি চালের দাম ২৩০০ টাকা। এক মাস আগে ছিল দুই হাজার টাকা। বেতি-২৮ জাতের চালের দাম ২৯শ টাকা। এক মাস আগে চার থেকে ৪৫০ টাকা কম ছিল। অপেক্ষাকৃত ভালোমানের চাল কাটারিভোগ। বর্তমানে এসব চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০ টাকায়। এক মাস আগে ছিল ৩৩০০ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘মিলার-মোকাম পর্যায়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এখন বড় বড় মোকামে ধান মজুত করে রাখা হয়েছে। কয়েকটি মোকামে লাখ লাখ টন ধান মজুত। তারা কৃষকদের আগাম দাদন দিয়ে মৌসুমের শুরুতেই কম দামে ধান কিনেছে। এখন বাজারে চালের দাম বাড়ছে, তার সুফল কৃষক পাবেন না। চট্টগ্রামেও কয়েকজন মিলার মোকাম থেকে কম দামে চাল কিনে চট্টগ্রামে এনে বেশি দামে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছে।’

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘গত কয়েকদিনে চালের দাম (৫০ কেজিতে) ৫০ থেকে একশ টাকা বেড়েছে। কারণ ধানের দাম প্রতি মণে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা হওয়ায় কিছু ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে বাজারে চালের দামে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে।’

খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করবে সরকার। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল, একলাখ টন আতপ চাল এবং পঞ্চাশ হাজার টন গম। প্রতিকেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা, আতপ চাল ৪৪ টাকা এবং গম ৩৪ টাকা।

খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) তথ্য অনুযায়ী, ১১ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৮ লাখ ৮২ হাজার ২০৬ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে ধান একলাখ ৭০ হাজার ৬৪৫ টন, সিদ্ধ চাল ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫ টন এবং আতপ চাল ৫৭ হাজার ২৮২ টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত সরকারি খাদ্যগুদামে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯০ টন খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১১ লাখ ১ হাজার ১৬৩ টন এবং ধান ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮১০ টন।

ভরা মৌসুমেও চালের বাজারের অস্থিরতার বিষয়ে ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই। নিয়ন্ত্রণ মূলত ব্যবসায়ীদের হাতে। খাদ্যমন্ত্রী নিজেই চাল ব্যবসায়ী। আগের মেয়াদেও তিনি খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে হুংকার দেন। পরে সেই হুংকার আর থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘এখন চালের ভরা মৌসুম। চালের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই। মজুত-সরবরাহেও কোনো সংকট নেই। তারপরেও দাম বাড়ছে। তার অন্যতম কারণ বাজারে সরকারি ভাবে মনিটরিং নেই। শোনা যাচ্ছে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ টন ধান মজুত করেছে। মজুত থেকে শুরু করে পাইকারি বিক্রি কোথাও সঠিক নজরদারি নেই।’ জাগোনিউজ।