ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ভয়াবহ আকার ধারণ করায় স্যুপের চাহিদা বেড়েছে। এতে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে স্যুপে সরবরাহে। কোম্পানিগুলো বলছে, উৎপাদন সক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করেও চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
দেশে স্যুপ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালের পর থেকে পণ্যটির চাহিদা বছরে ২০-২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সে সময়ের আগে বাজারে খুব একটা প্রবৃদ্ধি ছিল না। মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসছে। পাশাপাশি বিগত সময়ে করোনা এবং বর্তমানে ডেঙ্গুর কারণে বেড়েছে স্যুপের চাহিদা।
কোম্পানিগুলো বলছে, দেশে বছরে এখন স্যুপের চাহিদা ৬০০ টন। ২০২০ সালের আগে যা অর্ধেক ছিল। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে স্যুপের বাজার বর্তমানে ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি।
বাংলাদেশে স্যুপের শুরুটা হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানি নেসলের হাত ধরে। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে সামান্য কিছু স্যুপ আমদানি হতো। তবে বিক্রি হতো সীমিত। ১৯৯৭ সালে বাজারজাত শুরুর পর থেকে দেশে এখন পর্যন্ত স্যুপের ৭০-৮০ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছে নেসলের ব্র্যান্ড ‘ম্যাগি’। বর্তমানে বাংলাদেশের বড় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল বাজারজাত করছে ‘ক্যান্টন’ ব্র্যান্ডের স্যুপ। এছাড়া আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার ‘নর’ ব্র্যান্ডের স্যুপ এনেছে বাজারে।
স্যুপের বাজার নিয়ে নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক ও কোম্পানি সচিব দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির পর থেকে স্যুপের বাজার বড় হচ্ছে। এরমধ্যে আবার এখন ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বেড়েছে। মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসেবে স্যুপকে গ্রহণ করেছে। আবার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে খাদ্যাভ্যাসেও আসছে পরিবর্তন, যা স্যুপের চাহিদাকে ধারাবাহিক ভাবে বাড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একটি দেশের সার্বিক চাহিদা বিবেচনায় নিলে এখনো স্যুপের বাজার ছোট। এ ব্যবসা শুরুর পরও খুব একটা বড় হয়নি বাজার, যা এখন হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ঢাকার রামপুরা, মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেসব এলাকার অধিকাংশ দোকানে স্যুপের সরবরাহ কম। বিক্রেতারা বলছেন, অর্ডার দিয়েও স্যুপ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ক্রেতাদের অনেকে স্যুপ না পেয়ে ফিরেও যাচ্ছেন।
সরেজমিনেও ওই এলাকায় প্রায় ১০টি মুদি দোকানের মধ্যে স্যুপ পাওয়া গেছে ছয়টিতে। আবার কোথাও মিললেও চাহিদামতো ফ্লেভার বা পরিমাণ মিলছে না।
রামপুরায় ‘ভাই ভাই স্টোর’-এর মালিক এনামুল হক বলেন, গত একমাসে কয়েক দফা অর্ডার নিয়েছে স্যুপ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। কিন্তু পণ্য দেয়নি। গত তিনদিন আগে মাত্র দুই বক্স স্যুপ দিয়েছে। যা এক-দুই দিন বিক্রি করা যাবে।
তিনি বলেন, আগে এতো স্যুপের চাহিদা ছিল না। ডেঙ্গু চাহিদা বাড়িয়েছে।
তবে সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আগোরা সুপারশপের অপারেশন অফিসার মোস্তফা কামাল বলেন, প্রচুর স্যুপ বিক্রি হচ্ছে এখন। ওয়্যারহাউজ থেকে চাহিদা দিয়ে আমরা এখনো স্যুপ পাচ্ছি, সে কারণে সরবরাহ সংকট নেই।
এ বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের কোম্পানি এখন শতভাগ উৎপাদনে রয়েছে। দোকানেও শতভাগ সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আরও সরবরাহ বাড়ানোর।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগের পরিচালক শামিমা আক্তার বলেন, গত দুই মাসে নর স্যুপের চাহিদা বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের থেকে বেশ ভালো বাজার প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সৌজন্যে, জাগো নিউজ।