ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ধান-চালের ভরা মৌসুমে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। চালের এমন মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরাও। চালের এমন হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির ছয়টি কারণ উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে।
ভরা মৌসুমে চালের এমন মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম। তিনি বলেন, ‘মৌসুমের সময় চালের দাম বৃদ্ধি আমাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। সাধারণত এ সময়ে চালের দাম থাকে নিম্নমুখী। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে ঠিক উল্টো। গত কয়েকদিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম পাইকারি বাজারে বেড়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু করপোরেট হাউস ও বড় বড় মিল মালিক ধান-চাল মজুদ করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। মজুদ ও সরবরাহ চেইন বিঘ্ন হওয়ায় চালের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ।’
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রশাসন ও জনগণ ছিল নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের ব্যস্ততার কারণে প্রশাসন দ্রব্যমূল্যের মনিটরিংয়ে খুব একটা নজর দিতে পারেনি। এ সুযোগে কারসাজি সিন্ডিকেট নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। এছাড়া চালের দাম বৃদ্ধির অন্য কোনো কারণ দেখছি না।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে চলছে ধান কাটার মৌসুম। তার ওপর বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে ফসল উৎপাদনও হয়েছে ভালো। ধান-চালের এমন ভরা মৌসুমের মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। অনুসন্ধানে চালের মূল্যবৃদ্ধির কমপক্ষে ছয়টি কারণ জানা গেছে। যার মধ্যে রয়েছে- ধানের উৎপাদন এলাকা নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে ধানের দাম বৃদ্ধি, মোকাম ও মিল থেকে পর্যাপ্ত ধান-চাল সরবরাহ না হওয়া, বড় বড় কিছু ব্যবসায়ী ও মিল মালিকের ধান ও চাল মজুদ প্রবণতা বৃদ্ধি, মজুদ বৃদ্ধির ফলে ধান-চালের স্বাভাবিক সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়া, কতিপয় সিন্ডিকেটের বাজার কারসাজি, আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে চাতাল মালিকরা ধান শুকাতে না পারা অন্যতম।
চালের এমন অস্থিরতার মধ্যে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহ আগে নাজিরশাইলের ২৫ কেজির বস্তা মানভেদে ১৩২০ টাকা থেকে ১৯০০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে। একইভাবে অন্য সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া আতপ চাল, মিনিকেট, পাইজাম, বালাম সিদ্ধ, চিনি গুঁড়াসহ অন্যান্য চালের বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।
চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় খাতুনগঞ্জের একাধিক চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানান, সাধারণত ধানের মৌসুমে চালের বাজার থাকে নিম্নমুখী। এবার ভালো ফসল হওয়ার পরও সিন্ডিকেট কারসাজি ও অতি মজুদের কারণে বাজারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। গত এক সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়ছে। মৌসুমে চালের দামের পরিস্থিতি এমন হলে বছরের অন্যান্য সময় দাম আরও বাড়বে।