ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুর জেলা। কোনো এক সময় রায়পুরসহ চার উপজেলার ঘাটগুলোতে ইলিশ বেঁচাকেনা মুখরিত ছিল। ২০২০ সালে ইলিশের ভরা মৌসুমে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। কিন্তু সেই ইলিশই বর্তমান হাট-বাজারগুলোতে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আধা কেজি ওজনের ইলিশ ৩০০ টাকা আর ছোট আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা। কিন্তু চার বছরের ব্যবধানে ইলিশের দাম বেড়েছে তিনগুনেরও বেশি।
৩০০ টাকা বা ৪০০ টাকা কেজির কোনো ইলিশ মাছ এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। ইলিশের দাম বাড়তে শুরু করেছে ২০২১ সালের পর থেকে। কারণ তখন থেকেই মেঘনায় ইলিশের আকাল দেখা দেয়। তবে সে বছর এখনকার দামের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
আবার ২০২২ সালের দিকে যখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন ইলিশের দাম বেড়ে যায় আরও এক ধাপ। এভাবেই বছর বছর ইলিশের দাম বেড়ে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে এ মাছের স্বাদ নেওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
২০২০ সালে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকার নিচে। ২০২১ সালে ওই মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে হাজার টাকার মধ্যে। আবার একই ওজনের ইলিশের কেজি এখন ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকার কম নয়। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাওয়া যেত ৮০০ টাকার মধ্যে। সেই মাছ বর্তমান বাজারে ১২০০ টাকার কমে কেনা সম্ভব হচ্ছে না৷ মাঝারি আকারের ইলিশ পাওয়া যেত কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা করে।
নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে ছিল যে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের জাটকা ইলিশ। সেই জাটকাও এখন সাধারণ ক্রেতাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকার থেকে ৭০০ টাকার কমে এখন আর কোনো জাটকা বিক্রি হয় না। তিন বছর আগেও একই ওজনের জাটকা পাওয়া যেত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
চার বছরের ব্যবধানে মাছের মূল্য দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ হওয়ার পেছনে নদীতে মাছের আকাল, জ্বালানি তেলের দাম এবং মাছ শিকারের খরচ বাড়াকে দায়ী করছেন জেলে, আড়তদার, ক্রেতা এবং বিক্রেতারা।
২০২১ সালে বাজার দর অনুযায়ী এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম হাঁকানো হতো ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। আর ছোট আকারের ইলিশ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
এক বছর আগে ২০২০ সালে ইলিশের বাজার দরের দিকে তাকালে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। আধা কেজি ওজনের ইলিশ ৩০০ টাকা আর ছোট আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হত।
রায়পুরের বড় মাছঘাট চান্দার খালের আড়তদার জামাল হোসেন বলেন, মেঘনা নদীতে গত কয়েক বছর ধরে ইলিশ মাছ কমে গেছে। গত চার বছর আগে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেতাম। কম দামে বিক্রি করেও আমাদের অনেক লাভ হত। কিন্তু এখন বেশি দামে বিক্রি করেও লাভ হচ্ছে না।
একই এলাকার জেলে মো. আইয়ুব মাঝি বলেন, ট্রলারে জ্বালানি তেল নিয়ে আমাদের সাগরে মাছ শিকারে যেতে হয়। কিন্তু ডিজেলের দাম প্রায় দেড়গুন বেড়েছে। আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। আর নদীতে মাছও নেই। তাই মাছ শিকারের খরচ বাড়ার কারণে বাজারে ইলিশের দামও বেশি।
ট্রলার মাঝি সিদ্দিক হাজি বলেন, নদী ও সাগরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। কম দামে মাছ বিক্রি করেও আমাদের লাভ হতো। জেলেদের পোষাত। কিন্তু এখন লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে নদীতে ট্রলার পাঠাই। মাছ ধরে ঘাটে এনে বিক্রি করি। নদীতে গিয়ে যে খরচ হয়, সে খরচও ওঠে না। আমাদের লাভের বদলে লোকসান হয়। ঘাটে বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করতে হচ্ছে।
হাজিমারা সুইসগেইট এলাকার মাছ ঘাটের আড়তদার আলমগীর হোসেন বলেন, তিন চার বছর আগে ঘাটে প্রচুর মাছ আসতো। দুই বছর আগেও পাইকারি বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হতো ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যে। খুচরা বাজারে হাজার টাকার মধ্যে ছিল। সেই ইলিশ এখন ঘাটেই ১৫০০ টাকার ওপরে। বাজারে ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা মাছ ব্যবসায়ী আবিদ সৈয়াল বলেন, দুই বছর আগেও জাটকার কদর কম ছিল। ২০০ থেকে আড়াইশ টাকায় বিক্রি হতো জাটকা। এখন ৬০০ টাকার নিচে কোনো জাটকা নেই।
আলতাফ মাস্টার মাছ ঘাটে ইলিশ মাছ কিনতে আসা ক্রেতা সেলিম হোসেন বলেন, বাড়ির জন্য মাছ কিনতে আসছি। কিন্তু যে দাম, কেনার সাধ্য নেই। তিন-চার বছর আগেও মাছের এতো দাম ছিল না। এখন ঘাটে মাছ নেই, তাই দাম কয়েকগুন বেশি।
তিনি বলেন, ঘাট থেকে জাটকার হালি কিনেছি ৫০০ টাকা করে। ৫০০ গ্রাম ওজনের ১০টি ইলিশ কিনেছি ৬ হাজার টাকা দিয়ে। মাছের যে দাম, ক্রেতাদের সাধ্যের বাহিরে চলে যাচ্ছে।
মা ইলিশ রক্ষায় মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলের রায়পুরসহ জেলার চার উপজেলায় মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। গত শনিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।