ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও রোজার আগে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, হ্যাচারি পর্যায়ে মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে। খামারে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে বাজারে মুরগির দামও বাড়তি।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৯৫ থেকে ২১০ টাকা। সর্বোচ্চ দাম ছিল ২২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বাজারে একই মুরগির দাম ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। রোজার এক মাস আগে বাজারে ব্রয়লারের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে ক্রেতারা।
গত পাঁচ দিনে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাজার, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজার, চকবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে গড়ে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। বৃহস্পতিবার দাম ১৭৫ টাকায় উঠে আসে। শনিবার রাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গত দুই দিনে দাম সর্বোচ্চ ২১০ টাকায় পৌঁছায়।
ক্রেতারা জানান, গত বছর একই সময়ের রোজার আগে ব্রয়লারের দাম ২৫০ টাকার কাছাকাছি হয়েছিল। এ বছরও রোজার আগে দাম বাড়ছে। বাজারে ক্রেতাদের হাতের নাগালে থাকা প্রাণিজ আমিষের উৎসের একটি হলো মুরগি। বাজারে এখন মুরগির দামও বাড়ছে।
এদিকে খামারিদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ গড়ে ১৬৫ টাকা। অথচ বাজারে গড় দাম ২০৫ টাকার আশপাশে। সে অনুযায়ী উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে ব্রয়লারের দাম কেজিতে ২৪ শতাংশ বেশি।
সরবরাহ কমেছে বাচ্চার
ব্রয়লারের বাড়তি দামের বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ১০ জন খামারির সঙ্গে। তাঁরা জানান, বাজারে মুরগি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল মুরগির বাচ্চা। বর্তমানে প্রতিটি বাচ্চার দর ৪৯ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ হলেও এই দামে হ্যাচারিগুলো বাচ্চা দিচ্ছে না। প্রতিটি বাচ্চা কিনতে এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকা খরচ হচ্ছে। আর প্রতি কেজি মুরগির খাবারে খরচ হচ্ছে ৭০ টাকার বেশি।
সীতাকুণ্ড উপজেলার খামারি মো. নুরুজ্জামান বলেন, হ্যাচারিগুলো বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে ৪৯ থেকে ৫২ টাকা। তবে এই দামে তাঁরা বাচ্চা দিচ্ছে না। আবার ৬০ টাকা দরে বাচ্চা দিলেও চাহিদার অর্ধেক বাচ্চাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন হচ্ছে কম। এর মধ্যে শীতকালে রোগবালাইতে মুরগি মারা গেছে সব খামারির।
খামারিদের তথ্য অনুযায়ী, একটি ব্রয়লার মুরগি এক কেজি থেকে এক কেজি ৩০০ গ্রাম হতে খরচ হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। এর সঙ্গে লভ্যাংশ যুক্ত করে বাজারে ব্রয়লার সরবরাহ করে খামারিরা। সোমবার রাতে বাজারে গড়ে ১৮০ টাকার আশপাশে ব্রয়লার সরবরাহ করেছেন খামারিরা।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিক্রেতা আবদুল হামিদ বলেন, মুরগির পরিবহন খরচ বিক্রেতাদের বহন করতে হয়। এর পাশাপাশি পরিবহনের সময় কোনো মুরগি মারা গেলে সেই লোকসানও বিক্রেতাদের। ফলে দাম সমন্বয় করেই বিক্রি করতে হয়।
রোজার আগে বাড়ে দাম
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের অভিযোগ, উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে মাংসের দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা। ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রেও এর বিপরীত নয়। প্রতি বছর রোজার আগে তাঁরা দাম বাড়িয়ে দেন নানা অজুহাতে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের গত দুই বছরের তথ্যও একই কথা বলছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে রোজার এক মাস আগে ব্রয়লারে দাম বেড়েছিল অন্তত ১০ টাকা।
২০২২ মার্চ মাসের শুরুতে ব্রয়লারের দর ছিল প্রতি কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। তবে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে রোজার দুই সপ্তাহ আগে দাম ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরুতে দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। আর রোজার দুই সপ্তাহ আগে দাম ছিল ২২০ থেকে ২২৫ টাকা।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে, সেটি সবার প্রশ্ন। ব্রয়লারের ক্ষেত্রে যে উৎপাদন খরচ দেখানো হচ্ছে, সেটি বাড়িয়ে বলা হচ্ছে, সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।
আইন অনুযায়ী, বাজারে কৃষিপণ্যের (মুরগিসহ) দাম নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির দায়িত্ব রয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।
চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের বলেন, খামারিদের কাছ থেকে উৎপাদন খরচের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে আলোচনা করা হবে। রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম আলো।