ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ভরা মৌসুমে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা স্বত্বেও রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে মোটা ও চিকন চালের দাম কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রভাব আরও বেশি।
সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিকন মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, ভালো মানের নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা, নিম্নমানের নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মোট আটাশ চাল ৫৪ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) ৫০ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) ৫২ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগে একই বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, ভালো মানের নাজিরশাইল ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা, নিম্নমানের নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা, আটাশ চাল ৫০ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) ৪৭ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। এক সপ্তাহে মোটা ও চিকন চালের দাম কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির হার আরও বেশি।
হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য মিল মালিকদের দুষছেন পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রেতারা। তারা বলছেন, নির্বাচনের সময় সরকারের তেমন তদারকি না থাকায় মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
কাওরান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. শাহজাহান তালুকদার বলেন, নির্বাচনের দুই/তিন দিন আগে থেকে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াতে শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সব ধরনের চালেই বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, বস্তায় দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা যদি কম দামে কিনতে পারতাম, তাহলে কম দামেই বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু আমাদেরই চাল কিনতে বেশি খরচ হচ্ছে। বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিকই আছে।
মো. জসিম উদ্দিন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, সরকারকে জিম্মি করে মিল মালিকেরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ভেবেছে সরকারের কাছে এখন টাকা নেই। দাম বাড়ালেও আমদানি করতে পারবে না। আর এ কারণে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নইলে এখন চালের ভরা মৌসুমে দাম বাড়বে কেন?
তিনি বলেন, সরকারি ভাবে বাজার মনিটরিং করা হয়। যারা বাজার মনিটরিং করতে আসে, তাদের যাওয়া উচিত মিল মালিকদের কাছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সেখানেই করতে হবে।
মো. মোশাররফ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, এখন চালের দাম বাড়ার কথা নয়। মিনিকেট ছাড়া সব ধরনের চালই বাজারে উঠেছে। কিন্তু তারপরও মিল মালিকেরা নির্বাচনের ফাঁকে সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাসেল নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, মিলগুলো থেকে আমাদের ঘাটতি দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাজারে চাল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।
তবে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের দায়ী করছেন মিল মালিকেরা। তারা বলছেন, কৃষক পর্যায় থেকে ধানের দাম বেশি রাখায় চালের দাম বাড়ছে।
তবে দেশ অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী রনি বলেন, আজ ধান কিনতে গিয়ে দেখি প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান এক হাজার ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ধান প্রসেস করে চাল করতে এক হাজার ৬১০ টাকা পড়ে যাবে। এ কারণে ধানই কিনিনি। অথচ এই আমনের মৌসুমের শুরুতেও প্রতি মণ ধানের দাম ছিল এক হাজার ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। কৃষক পর্যায় থেকেই ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। কিন্তু থেকে যারা চাল মজুদ করে রেখেছিল, তারা তো কম দামে বিক্রি করতে পারে।
ঊর্ধ্বগতির বাজারে নতুন করে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে সরকারের তদারকির অভাব ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন তারা।
সোমবার দুপুরে কাওরান বাজার থেকে মাত্র এক কেজি মোটা চাল কেনেন দিনমজুর মো. জাফর। তিনি বলেন, বাজারে চাল আছে। তারপরও প্রতিদিন দাম বাড়ছে। শুধু চাল কেন, কোনো জিনিসের দামই তো কম না। আমরা দিন দিন নিরুপায় হয়ে পড়ছি। পেট ছোট করে ফেলছি। আগে যেখানে পাঁচ কেজি চাল কিনতাম, এখন সেখানে মাত্র এক কেজি কিনছি। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।
বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসান মাহিম। তিনি পান্থপথ এলাকায় ব্যাচেলর থাকেন। মাহিম বলেন, চাল, ডাল, শাক, সবজি সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া। যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে নিজের খরচই চলে না। বাড়িতে টাকা পাঠাবো কী? উল্টো মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে টাকা এনে চলতে হয়। আমরা মধ্যবিত্তরা শেষ হয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোর তদারকির অভাবে বাজারের এ অবস্থা। আর এর ফায়দা লুটে নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এখন চালের ভরা মৌসুমেও তারা কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।