ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: প্রতিবছরই ঈদের আগে চাহিদা বাড়ে পোলট্রি পণ্যের। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে মুরগি-গরু-খাসির দামও।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই চড়া মুরগির বাজার। গরু ও খাসির বাজার এখনও স্থিতিশীল থাকলেও ঈদের আগে আগে দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা।
রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বড় আকারের প্রতিকেজি বয়লার মুরগি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা ও ছোট আকারের বয়লার মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও যথাক্রমে ২০০-২১০ ও ২১০-২২০ টাকা ছিল।
এছাড়া বর্তমানে এ দুই বাজারে পাকিস্তানি কক নামে পরিচিত সোনালি মুরগির কেজি ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা, হাইব্রিড সোনালি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, লেয়ার ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে চাহিদা বাড়ায় এবং সরবরাহ কম থাকায় স্বাভাবিকভাবেই দাম কিছুটা বাড়ে।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. জিয়াউল হক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম বেশি। ঈদের কারণে মুরগির ট্রাকগুলো ঠিকমতো রাজধানীতে আসতে পারছে না। এ সময় ট্রাক চলাচল কম থাকে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই। আবার যেগুলো আসে সেগুলোকে ঈদের জন্য রাস্তায় বেশি চাঁদা দিতে হয়। ফলে মুরগির দাম কিছুটা বেশি।
মুরগির দাম আর বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর মনে হয় না বাড়বে। বাড়লেও সর্বোচ্চ ১০ টাকা কেজিতে বাড়তে পারে।
মহসিন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, আমরা প্রতিদিন মুরগি কিনি। যেদিন যেই রেটে কিনি সেই রেটেই বিক্রি করি। আমাদের কেনা কম থাকলে কম দামে বিক্রি করি। বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি। মুরগির দাম বাড়লে আমাদেরই লস। মানুষ কিনতে চায় না।
এদিকে মুরগির দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদেরই দুষছেন ক্রেতারা। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার দায় চাপাচ্ছেন সরকারের ওপর। পাশাপাশি দাম বাড়ায় ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী মুরগি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে।
খালেকুজ্জামান নামে এক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতারা ঈদের আগে একজোট হয়ে দাম বাড়িয়েছেন। তারা নাকি বেশি দামে কিনেছেন। কিন্তু তারা কত দামে কিনেছেন সেটা তো আর আমরা জানি না। বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার ব্যর্থতা সরকারেরই। সরকারেরই তো নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। এদের (ব্যবসায়ী) আর দোষ কী।
হুমায়ুন কবির নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কোনো কিছুর দাম বাড়লে ক্রেতাদের ওপর তো প্রভাব পড়বেই। চার কেজি মুরগি কিনতে এসে দুই কেজি কিনতে হচ্ছে দামের কারণে। চাহিদার সঙ্গে জোগানের মিল না থাকলে তো দাম বাড়বেই। তবে জোগানটা বন্ধ করছে কে সেটা দেখা দরকার। এখানে ক্রেতাদের কিছুই করার নেই। ক্রেতারা অনেকটা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। সরকার দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু জনবল সংকট ও সমন্বয়ের অভাবে সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। জনগণ ও ব্যবসায়ীদের উচিত সরকারকে সহযোগিতা করা। নিজেদের নৈতিক অবক্ষয় না করা।
এদিকে গরু ও খাসি আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে আগামীকাল থেকে দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
স্বপন নামে এক খাসি বিক্রেতা বলেন, দাম আজ পর্যন্ত বাড়েনি। তবে আগামীকাল থেকে বাড়তে পারে। কারণ ট্রাক বন্ধ থাকায় খাসি আসছে না। সরবরাহ যদি না থাকে তখন আমাদেরই তো বেশি দামে কিনতে হবে। ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।
মোতালেব নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, কাল থেকে গরুর মাংস ৮০০ ও খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে পারে। কারণ জোগান নেই।
তবে এনামুল নামে আরেক বিক্রেতার দাবি দাম বাড়বে না। কারণ এমনিতেই গরু ও খাসির মাংসের দাম অনেক বেশি। যার কারণে মানুষ কিনছে না। এখন আবার যদি দাম বাড়ে তাহলে তো বিক্রিই হবে না।