ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক :
আসন্ন কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে অস্থির হয়ে উঠেছে মসলার বাজার। সরবরাহ সংকটের সুযোগে বাড়তি মুনাফা করতে আমদানিকারকরা বাজার অস্থির করে তুলছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
মসলা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, জিরা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো মসলা পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে।
জানা গেছে- ডলার সংকট এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের কারণে আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটায় সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে দেশের মসলার বাজারে। আর এতে গত তিন মাসে অনেকটাই বেড়েছে মসলার দাম।
বাজার দর ও পাইকারি মসলা ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, গত তিন থেকে ছয় মাসে মসলা পণ্যের দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে জিরার দাম। মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের প্রধানতম গরম মসলার একটি জিরা। কিন্তু জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ ও এলাচের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি আসন্ন কুরবানির ঈদে ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৭০ থেকে ৮৫০ টাকায়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এ জিরা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকার বেশি দামে। দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, তিন মাস আগেও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে জিরা, যা বর্তমান দামের চেয়ে প্রায় ৪৫০ টাকা কম।
একইভাবে কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ ১৫০০ টাকা, ৭০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ ১৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা বেড়ে জায়ফল ৩০০০ টাকা, ২০০ টাকা বেড়ে মিষ্টি জিরা ৩১০ টাকা, ১৫০ টাকা বেড়ে গোলমরিচ ৬৭০ টাকা, ১৫০ টাকা বেড়ে জয়ত্রী ৭৫০ টাকা, ৭০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৩২০ টাকা, ৬০ টাকা বেড়ে ধনিয়া ১৮০ টাকা, ৫০ টাকা বেড়ে সরিষা ১০৫ টাকা এবং ২০ টাকা বেড়ে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।
এছাড়া সরবরাহ সংকটে চীনা আদা ও চীনা রসুনের দামও অস্থির রয়েছে বাজারে। তবে চীনা আদার সরবরাহ না থাকায় সম্প্রতি মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে আসা আদার দাম ২৬০-২৮০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চীনা রসুনের দামও ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে।
স্বাভাবিক সময়ে ১৫০-২৫০ টাকার মধ্যে শুকনা মরিচ বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ঠেকেছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। তবে মসলা পণ্যের মধ্যে স্থির থেকে ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আস্ত শুকনা হলুদ। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৪৫ টাকায়। আর স্থানীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকায়। যদিও সরকারের আমদানি অনুমতির ঘোষণার আগ পর্যন্ত পণ্যটির দাম ঠেকেছিল ১০০ টাকায়।
এ ব্যাপারে খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারকরা জানান, বাংলাদেশের অধিকাংশ মসলা পণ্যই আমদানি হয় বিশ্ববাজার থেকে। এক সময় ব্যবসায়ীরা ৮২ থেকে ৮৪ টাকার ডলার দিয়ে পণ্য আমদানি করত। এখন ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১১২ টাকা। পণ্যের দামের ওপর শুল্ক নির্ধারণ হওয়ায় আমদানি খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যার কারণে মসলা পণ্যের দাম অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি।
এছাড়া বিলাসী পণ্য হিসেবে মসলা আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি ছাড়াও আমদানি কমে যাওয়ায় আসন্ন কুরবানির ঈদে দেশে মসলার দাম চড়া থাকবে বলে শঙ্কা তাদের। দেশে যে পরিমাণ মসলার চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে আমদানি অনেক কম। কুরবানির ঈদে গরম মসলার চাহিদা থাকে কয়েকগুণ বেশি। ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে আমদানিকৃত গরম মসলার দাম বেড়েছে। আমদানি সংকট নিরসন ছাড়া দেশে মসলার বাজার স্থিতিশীলতায় ফেরার কোনো সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে খাতুনগঞ্জের কাঁচা মসলা পণ্য ব্যবসায়ী সমিতির (হামিদুল্লাহ মার্কেট) সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিচ মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দেশি উদ্যোক্তাদের উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার মৌসুমের সময় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল। ভোক্তাদের কিছুটা কষ্ট হলেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য এটি ভালো উদ্যোগ। তবে কৃষক বা উৎপাদনকারী যাতে ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ায় এখন আবার আমদানির অনুমতির ঘোষণায় বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি আদা-রসুনের দাম নিয়ন্ত্রণেও আমদানি নীতির ওপর সংশ্লিষ্টদের জোর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।