ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সবজির চড়া দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টির পর থেকে। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বেড়েছে দাম।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা এসব তথ্য জানান।
বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টির পর গত দু-তিন দিনের ব্যবধানে সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে এখন বাজারে প্রতি কেজি পটল, ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, লম্বা বেগুন, কচু, কাকরোল, বরবটি, চিচিংগা ১০০ টাকা এবং গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও প্রায় কেজিপ্রতি ৬০ টাকা কম ছিল।
এদিকে, শাক-সবজির এমন চড়া দামে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন। বাধ্য হয়ে তারা সবজি খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। তাতে চাপ পড়ছে পরিবারের পুষ্টির জোগানে, যা উদ্বেগজনক।
রাজধানীর সিপাহীবাগের রিয়াজবাগ এলাকায় দরিদ্র মানুষের বসবাস বেশি। এ এলাকার বাসিন্দা পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাবু ঘোষ। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা দিয়া সবজি কিনমু কেমনে? যা বেতন পাই, তার সবই যায় ঘর ভাড়া দিতে। এরপর চাল, ডাল তেলের দাম সাধ্যের বাইরে। আমাগোর টিকে থাকাই মুশকিল।
বাজারে এসে কিছু সবজি ও অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনার পর তার কাছে আর ২০ টাকা অবশিষ্ট আছে বলে জানান। যা দিয়ে তিনি কিছু শাক কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাজার ঘুরে সস্তায় কোনো শাক কিনতে পারেননি তিনি।
বাবু আরও বলেন, পুঁইশাকের আঁটি ৩০ টাকা চায়। শাক সবজির এত বেশি দাম আগে দেখিনি। কী খেয়ে বাঁচমু আমরা?
ওই বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, বৃষ্টি হলে সবজির দাম মাঝে মধ্যেই ওঠা-নামা করে। কিন্তু এখন অস্বাভাবিক বেড়ে রয়েছে। বৃষ্টি কমলেও সরবরাহ একদম বাড়েনি। কারণ টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিক্রেতারা সবজির দাম বেশি রাখছেন ব্যাপারটা এমন নয়। আড়ৎ থেকেই বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।
আরিফুল বলেন, এখন কারওয়ান বাজারে ভোরে সবজি নিয়ে টানাটানি লাগে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ থাকে অর্ধেক। সকালে গেলে সবজি মেলে না।
যদিও ব্যবসায়ীদের এমন কথার সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখনো তাই করছেন তারা। বাজার দেখে মনে হয় না সবজির সরবরাহ কম। কোথাও কোনো সবজির কমতি নেই। তাদের এ অজুহাত বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন অন্তত ৩০ শতাংশ সবজির ট্রাক কম আসছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, আগে কারওয়ান বাজারে যে পরিমাণ সবজির ট্রাক আসতো, এখন তার ৭০ শতাংশও আসে না। গ্রামগঞ্জের মোকামেই সবজির টান পড়েছে। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।