ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: অস্থির পণ্যের বাজারে গাইবান্ধায় স্থিতিশীল ছিল আলুর দাম। এখন সেই আলু এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। এমন পরিস্থিতিতে আলুও যেন ভোক্তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে হঠাৎ করে আলুর মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে, আলুর ঊর্ধ্বগতি দামের চিত্র। অগ্নিমূল্য নিত্যপণ্যের বাজার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আলু। খাবার প্লেটের প্রধান সবজি আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস ওঠেছে ভোক্তাদের।
এই আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হলে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বছর জেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও অস্বাভাবিক ভাবে দাম বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে কেউ বলেছেন অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব, আবার কেউ বলেছেন বাড়তি চাহিদার কথা। এছাড়া সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তাই কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আলুর দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় ১০ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। এ থেকে উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন। আর বার্ষিক চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ৩৩ হাজার ৩৫৯ মেট্রিক টন। চাহিদাকৃত এসব আলু ছাড়াও জেলার পাঁচটি কোল্ড স্টোরেজে আরও মজুদ আছে ২৯ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন আলু।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মৌসুম চলাকালে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। এখন চাহিদার তুলনায় সেই আলুর বস্তাগুলো হিমাগার থেকে বের না করায় আলুর দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে করে চরম ক্ষুব্ধ হচ্ছেন ক্রেতারা।
গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারে আলু কিনতে আসা মিজবাহুল ইসলাম বলেন, ‘তরকারির মধ্যে আলুই হচ্ছে প্রধান সবজি। দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে এটি কম বেশি থাকে। এর আগে আলু ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধির তালিকায় নতুন ভাবে যোগ হয়েছে আলুও। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।’
আরেক ক্রেতা আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, ‘রিকশা ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার চার সদস্যের হাড়িতে প্রত্যেক দিন অন্তত এক কেজি আলুর চাহিদা রয়েছে। এখন দাম বাড়ার কারণে আধা কেজি করে আলু কেনা হচ্ছে। এভাবে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ছে। এ যেন মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ।’
খুচরা বিক্রেতা ফুল মিয়া বলেন, ‘কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ আগে আলুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে ছিল। এরই মধ্যে ব্যাপারীদের কাছ থেকে বেশী দামে আলু কেনার ফলে কিছুটা লাভ রেখে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। হঠাৎ এই আলুর মূল্য বৃদ্ধির কারণে অস্থির হয়ে ওঠেছেন মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষ।’
পাইকারি বিক্রেতা (ব্যাপারী) সেলিম মিয়া বলেন, ‘গাইবান্ধার ধাপেরহাট ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকার হিমাগার থেকে আলুর বস্তা ক্রয় করা হচ্ছে। কোরবানি ঈদ থেকে আলুর বাড়তি চাহিদার কারণে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’
ধাপেরহাট আরভি কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু মজুদ আছে। ইদানিং আলুর দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা অনিয়মিত আলু বের করছেন।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুস ছালাম বলেন, ‘শুধু আলুই নয়, কেউ যেন অতিরিক্ত দামে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে না পারে, সে বিষয়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।’