ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়তি নয়। ভরা মৌসুমে সবজির পাশাপাশি সব ধরনের মাছ, মাংস, মুরগির দামও অনেক বেশি। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৭০, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৬০, কাঁচা টমেটো ৩০, কচুরমুখী ১০০ এবং গাজর ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৬০ টাকা ও বাঁধা কপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, করলা ৭০, ঢেঁড়স ১০০, পটল ৮০, বরবটি ১২০, ধুন্দুল ৮০, চিচিঙ্গা ৮০, খিরাই ৪০ থেকে ৫০, শশা ৬০, পেঁপে ৪০, ধনে পাতা ১০০ থেকে ১৫০, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, নতুন আলু ৬০, নতুন উঠা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০, পেঁয়াজের ফুলকলি ৬০ ও কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০, কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায় ও জালি কুমড়া ৪০ টাকা প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০, মূলা শাক ১০ থেকে ১৫, পালং শাক ১৫ ও কলমি শাক ১০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শীতের ভরা মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর শীতের সময় সব ধরনের সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি থাকে। তবে এ বছর ভরা মৌসুমে সব ধরনের সবজি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে ভরা মৌসুমেও অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। এতে করে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের এবং সাধারণ ক্রেতারা।
একই অভিযোগ জানিয়ে গুলশান সংলগ্ন লেকপার বাজারে বাজার করতে আসা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাজারে সব সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি। এর সঙ্গে সব ধরনের মাছের দাম এতই বেড়েছে যে, কেনার কোনো উপায় থাকে না। নানা অজুহাতে সবসময়ই বাড়তি যাচ্ছে মাছের বাজার। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, শীতের সময় সবজির দাম থাকবে সবচেয়ে কম, অথচ এই সময় এসে সব ধরনের সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি।
ভরা মৌসুমেও কেন সবজির দাম এত বেশি? এ বিষয়ে সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হঠাৎ আকস্মিক বৃষ্টিতে ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। এছাড়া, কয়েকদিনের তীব্র শীতের কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে ফসল তুলতে পারেনি। যে কারণে ঢাকার বাজারে সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
তিনি বলেন, মূলত কিছুদিন আগের আকস্মিক বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় এবার ভরা মৌসুমে এসেও সবজির দাম কিছুটা বাড়তে যাচ্ছে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সবজি নিয়ে আসার পরিবহন খরচ এবং বিভিন্ন অদৃশ্য খরচগুলোর কারণে সবজির দাম এবার একটু বেশি।
বাজারে আসা কলেজ শিক্ষক আবদুল ওহাব বলেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন এতো দামে সবজি বিক্রি হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বাজারে সাংঘাতিকভাবে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এ পরিস্থিতি।
তবে সবজির দাম বাড়ার পেছনে কুয়াশাকে দায়ী করেছেন কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা এনামুল হক। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। সে কারণে ঢাকায় তুলনামূলক পণ্য কম আসছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবও পড়েছে বাজারে।
নতুন পেঁয়াজ ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ দেশিটা (পুরাতন) ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে চলতি সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। যা গত সপ্তাহে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। সোনালি কক, সোনালি হাইব্রিড কক ও লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বাজারগুলোতে সোনালি কক ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ ও লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২০০ ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা।
শেওড়াপাড়া বাজারে মুরগি বিক্রেতা সোহেল বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। দুই মাস ধরেই মুরগির বাজারে অস্থিরতা চলছে। এতে করে আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমায় আমরাও দাম কমিয়ে বিক্রি করছি।
গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, এক কেজি শিং মাছ (চাষের, আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৫০০, রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০, মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ৯০০, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০, পাঙাস ২০০ থেকে ২২০, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০, বোয়াল মাছ ৪০০ থেকে ৯০০, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ২২০, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০, মলা ৫০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, কাচকি মাছ ৬০০, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০, রুপচাঁদা ১০০০, বাইম মাছ ১০০০ থেকে ১২০০, দেশি কই ১০০০, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, আড়ই মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।