ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর থেকে ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড এবং মিশর থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে। দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে বড় ব্যবসায়ীরা এলসি খোলা বন্ধ করে দিলে ছোট আমদানিকারকরা পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড এবং মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলেন। ০৫ অগাস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই ওইসব দেশের পেঁয়াজের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে চলে আসে। এরই মধ্যে বন্দর থেকে খালাস নিয়ে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ বাজারে ছেড়েছেন। তাতেই কমতে শুরু করেছে দাম।
খাতুনগঞ্জের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে পেঁয়াজের দাম।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯২ টাকা, চায়না পেঁয়াজ ৫৫, মিশর থেকে আসা পেঁয়াজ ৭০ এবং পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই। এ বাজার থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলা-উপজেলায় ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। পাইকারি এ বাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামজুড়ে। তবে বাড়লে যত দ্রুত প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ে, কমলে ধীরে ধীরে প্রভাব পড়ে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে বিভিন্ন দেশের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। আবার বিগত সময়ে চোরাইপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের জোগানও রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আবদুল মাবুদ সওদাগরের পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে বৈধ উপায়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। এখন পাকিস্তান, মিশর, চায়না থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। যে কারণে এখন বাজারে সংকট নেই। দামও কমছে। অন্তত আগামী দুই মাস বাজারে পেঁয়াজের সংকট হবে না।
তিনি বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯২ টাকা, চায়না পেঁয়াজ ৫৫, মিশর থেকে আসা পেঁয়াজ ৭০ এবং পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
খাতুনগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব বলেন, ‘চলতি মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কম হয়েছে। তারপরও ভারতীয় পেঁয়াজ এখনো বাজারে আছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি পাকিস্তানি পেঁয়াজ বেশি চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে বড় অনেক ব্যবসায়ীর জন্য ছোট আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারতেন না। গত মাসে ছোট অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন। এলসির এসব পেঁয়াজ চলে আসায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, দামও কমছে।’
খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় আমাদের দেশের অনেক ব্যবসায়ী বাইরের অন্য দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাজারে বেচাকেনা কম। খাতুনগঞ্জে এখনো খরিদদারও কম। পুরোদমে ব্যবসা জমে ওঠেনি। ভারত বাদে বাইরের যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে সেগুলো হয়তো ধারাবাহিক আমদানির সম্ভাবনা কম।’
কাস্টম সূত্র বলছে, চলতি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ২ হাজার ৮৩২ টন পেঁয়াজ শুল্কায়ন ও খালাস হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসা ১ হাজার ৯৩৩ টন, চায়না থেকে ৫৮০ টন, মিশর থেকে ৩১৪ টন এবং থাইল্যান্ড থেকে আসা ৫ টন পেঁয়াজ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে চায়না ও মিশর থেকে আসা পেঁয়াজের সাইজ বড়। চায়না পেঁয়াজ কেজিতে ৭-১০টি ধরে, একইভাবে মিশরীয় পেঁয়াজ ধরে ১০-১৪টি। বড় সাইজের হওয়ায় খুচরা বাজারে এসব পেঁয়াজের চাহিদা কম। তবে পাকিস্তানি পেঁয়াজ ভারতীয় পেঁয়াজের কিছুটা কাছাকাছি।
এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি ছিল। একই ভাবে এক মাস আগে দেশি এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ১০৫-১২০ টাকা।