ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: এখনো প্রায় এক মাস বাকি কোরবানি ঈদ। এর আগেই দিনাজপুরের হিলিতে বেড়েছে মসলাজাত পণ্যের দাম। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে জিরাসহ মসলা জাতীয় পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ১/২ গাড়ি জিরাসহ অন্যান্য মসলাপণ্য আমদানি হতো। এখন প্রতিদিনই ৫/৭ গাড়ি জিরাসহ মসলা পণ্য আমদানি হচ্ছে। প্রতি টন জিরা আমদানি হচ্ছে তিন হাজার ১৩০ ডলার মূল্যে।
কোরবানি ঈদের এক মাস আগে দাম বৃদ্ধিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্রেতারা বলেন, এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তারা অধিক মুনাফার আশায় মসলাজাত পণ্য মজুদ রেখে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমরা ভারতীয় জিরা, আদা, চায়না রসুন বিক্রি করি। আমদানিকারকদের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।
আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে ভারতের অভ্যন্তরে জিরাসহ অন্যান্য মসলাজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দাম কয়েক দিনের স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
শনিবার দুপুরে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক মাস আগে মানভেদে জিরা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকা দরে। এখন সেই জিরাই কেজিতে ১৩০ টাকা বেড়ে ৭০০ থেকে ৭১০ টাকা কেজি দরে হচ্ছে। অন্যান্য মসলা পণ্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কালো এলাচ ২৬০০ থেকে ২৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও তা এখন ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা কেজি দরে। সাদা এলাচ মাঝারি ৩৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও তা এখন কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ৩৫০০ টাকা কেজি দরে, সাদা এলাচ বড় ধরনের ৪১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও তা কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ৪২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও, দারুচিনি, লং, গোল মরিচ, ধনিয়া, কালো জিরা কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে, আমদানিকৃত আদা গত শনিবার (১৮ মে) প্রতি কেজি ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ (২৫ মে) বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। প্রতি কেজি দেশীয় রসুন ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। এক মাস আগে দেশীয় শুকনা মরিচ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ তা কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর শুক্রবার দেশীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ তা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রংপুর থেকে জিরা কিনতে আসা আকবর আলী বলেন, আমি এক মাস আগে হিলিতে ঘুরতে এসে তখন ৫৮০ টাকা কেজি দরে জিরা কিনেছি। আজ হিলিতে একটি কাজে এসে জিরা কিনলাম ৭০০ টাকা কেজি দরে।
আদা কিনতে আসা ফরহার হোসেন বলেন, কোরবানির ঈদের আগে হঠাৎ করেই আদার দাম বেড়ে গেছে। গত শনিবার প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছিল ২৪০ টাকা কেজি দরে। আমি ৬০ টাকা দিয়ে ২৫০ গ্রাম আদা কিনি। আর আজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। ৭০ টাকা দিয়ে ২৫০ গ্রাম আদা কিনলাম।
আরেক ক্রেতা ধরন্দা গ্রামের গোলাম মোর্শেদ বলেন, প্রতি বছর কোরবানি ঈদের আগে সব ধরনের মসলার দামে বাড়ে। এবারও বেড়েছে। গেল শনিবার প্রতি কেজি রসুন কিনি ২০০ টাকা কেজি দরে। আর আজ কিনতে হলো ২৪০ টাকা কেজি দরে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, হিলি বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আদা আসছে। কিন্তু আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মজুদ রেখে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
শুকনা মরিচ, আদা-রসুন ও পেঁয়াজ বিক্রেতা ময়নুল ইসলাম বলেন, আদা হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। আর চায়না রসুন আমদানি হয় অন্যদিকে দিয়ে। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি আদা ২২০ টাকায় কিনে ২৪০ টাকায় বিক্রি করি। আর রসুন ১৮০ টাকা কেজি দরে কিনে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। কিনতেই পড়ছে প্রতি কেজি আদা ২৬০ টাকা এবং রসুন কিনতে পড়ছে ২২০ টাকা। আমরা কেজিতে ২০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করছি। এ কারণেই শুকনা মরিচ,পেঁয়াজ আদা-রসুনের দাম বেড়েছে।
ডলার সংকট কাটিয়ে উঠলে ও জিরা আমদানিতে শুল্ক কমলে দাম আরও কমে আসবে বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা।
হিলি কাষ্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত ভারতীয় ৩৮৩টি ট্রাকে ১০ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন জিরা ও ভারতীয় ১৬টি ট্রাকে ২৫৩ মেট্রিক টন এলাচ এবং ভারতীয় ২৪১টি ট্রাকে ৪১৩৭ মেট্রিক টন আদা আমদানি হয়েছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে।