নিত্যপণ্যের স্বীকৃতি পাচ্ছে চাল-গম-আটা-আলু

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দীর্ঘ ৬৮ বছর পর নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ায় অবশেষে ধান, চাল, গম, আটা ও আলু নিত্যপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। তবে এবারও স্বীকৃতি পাচ্ছে না অবশ্য পানি। আবার সাবান, কীটনাশক, ডিটারজেন্ট পাউডার, টুথপেস্ট-এগুলো সমাজের সর্বস্তরে প্রতিদিন কমবেশি ব্যবহৃত হলেও নিত্যপণ্য হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে নিত্যপণ্য হিসেবে বাদ পড়ছে সিগারেট, কয়লা ও কাঠ। আর যুক্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ।

মতামত গ্রহণের জন্য অত্যাবশকীয় পণ্য আইন-২০২৪ এর খসড়া প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার (০৭ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নোটিশসহ খসড়াটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘দ্য কন্ট্রোল অব এসেনসিয়াল কমোডিটিজ অ্যাক্ট-১৯৫৬’ অনুযায়ী বাংলায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন-২০২৪ প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত খসড়া অধিকতর মতামত দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

২০১২ সালে একবার সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা সংশোধন করে। তখন ১৭ ধরনের পণ্যকে নিত্যপণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকা না-থাকার মধ্যে পার্থক্য কী- জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, তালিকায় থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার যেকোনো সময় ব্যবস্থা নিতে পারে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কেউ কারসাজি করলে, লম্বা সময়ের জন্য মজুত রাখলে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে তখন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। শুধু মূল্য নিয়ন্ত্রণ নয়, আইন অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করারও ক্ষমতা রাখে সরকার।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের খসড়া তালিকা
১. খাদ্যদ্রব্য- ধান, চাল, গম ও আটা, আলু, বীজ ও চারা, মশুর ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল ও তৈলবীজ, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, চিনি, খাবার লবণ (বিট লবণ ব্যতীত), চিনি, গুড়, মাছ, মৎস্যজাত খাদ্য, মাংস, দুধ, ডিম;

শিশু এবং রোগীর খাবার এবং অনুরূপ দ্রব্যাদি; ওষুধপত্র, সেই সঙ্গে যা ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়; চিকিৎসা এবং শৈল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি; কাগজ, নিউজপ্রিন্ট; সার; জ্বালানি তেল (পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল); গ্যাস (পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাস ও এলপিজি) ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি; বিদ্যুৎ (সৌরবিদ্যুৎসহ); লোহা ও ইস্পাত; সিমেন্ট।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, সরবরাহ, বিক্রি, নিষ্পত্তি, অধিগ্রহণ, ব্যবহার বা ভোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে এবং এগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত করতে পারবে সরকার।

পণ্যের বিক্রি স্থগিত রাখা বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতাও সরকারের থাকবে। এছাড়া যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি উন্মুক্ত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে সরকার। সরকার যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য নিম্নআয়ের জনগণের কাছে বিক্রির জন্য ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে সরাসরি পণ্য কেনার ক্ষমতা দিতে পারবে।

আইন লঙ্ঘনকারীকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান থাকবে। কেউ নির্দেশ পরিপালনে ব্যর্থ হলে, আদেশ লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে এমনকি প্ররোচণা দিলেও তিনি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা তিন লাখ টাকা জরিমানা গুনবেন অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে বিদ্যমান আইনে শুধু তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। নতুন আইনের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তি কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা দেবেন বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘১৯৫৬ সালের আইনের তালিকায় এমন সব পণ্য ছিল, যেগুলো নিত্যপণ্যের মধ্যে পড়ে না। ভালো দিক হচ্ছে চাল, গম, আটার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। তবে জীবন যার অপর নাম, সেই পানিকে বাদ রাখা ঠিক হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সাবান, কীটনাশক, ডিটারজেন্ট পাউডার, টুথপেস্ট ইত্যাদি নিত্যপণ্য হিসেবে থাকলে ভালো, না থাকলেও অসুবিধা নেই। তালিকা লম্বা না করাই ভালো, তবে সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার স্বার্থে যেগুলো থাকবে সেগুলোর উৎপাদন, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি ঠিক রাখার ব্যাপারে সরকার যেন আন্তরিক থাকে।’