ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাজারে সব ধরনের পণ্যের দামই বেড়েছে। গরিবের খাবারের পাতে পুষ্টিখ্যাত ডাল-আলু ভর্তা ও ডিমের যোগান দেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ এক কেজি আলু কিনতে খরচ হচ্ছে ৫০ টাকা। ডালের কেজি ১৩৫ টাকা এবং প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দাম ১৫৫-১৬০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুন ও বরবটির দাম ১০০ টাকায় ঠেকেছে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। কেজি ১২০ টাকা। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ মাছ-মাংসের কাছে ঘেঁষতেই পারছে না।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ায় উচ্চ শ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্নআয়ের মানুষ। যারা তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ৪০ টাকার আলু এখন ৫০ টাকা। অথচ গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বছরের ব্যবধানে ৬১ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি বেড়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের ১০ টাকা ৫০ পয়সা খরচ হচ্ছে। কৃষক সর্বোচ্চ ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। যা খুচরা বাজারে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়।
আলু বিক্রেতা আব্বাস বলেন, কিছুদিন পর পর একেকটা জিনিসের দাম বাড়ে, আর আমাদের হয় বিপদ। বেশি দামে পণ্য কিনলে তা বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ভোক্তার (ভোক্তা অধিদপ্তর) কর্মকর্তারা এসে আমাদের জরিমানা করে। কিছুদিন আগে কাঁচা মরিচ, পিয়াজের বেলায় এমন হয়েছে। আর এখন আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে।
খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা। যা গত বছর ঠিক একই সময় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম প্রতি ডজন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বাজারে মসুর ডালের কেজি ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেশারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে মসুরের ডাল ১২৫ টাকা কেজি, মোটা মসুরের ডাল ৯০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেশারি ডাল ৭০ টাকা, বুটের ডাল ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় এই ডালগুলোর দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।
বাজার করতে আসা সাব্বির বলেন, আমি বেশির ভাগ সময় মোটা মসুরের ডালই কিনতাম। এখন যে অবস্থা তাতে ডাল দিয়ে ভাত খেতে হলেও হিসাব নিকাশ করতে হবে মনে হচ্ছে।
দিনমজুর খলিল মিয়া বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। আগের চেয়ে ডাল, ডিম, আলুসহ সবকিছুর দাম এখন বেশি। অথচ এগুলো দিয়ে আগে দুইবেলা পার করতাম। যে টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি তা দিয়ে এগুলো এখন কীভাবে কিনবো, সেটাই ভাবছি। তবুও এই টাকার মধ্যে অল্প করেই চাল, ডাল ও ডিম কিনবো।
রাজধানীর খুচরা বাজারে গোল সবুজ বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। তবে লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। বরবটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি করলা ৬০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০, চিচিঙ্গা ৬০, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, ধনেপাতার কেজি ৪০০ টাকা, ছোট বাঁধাকপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, ফুলকপি ছোট আকারের ৪০-৫০ টাকা। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা, কচুরমুখি ৮০ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। আর প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা। এছাড়া দেশি ও আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ছিল ১৬৫-১৭৫ টাকা। কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি গচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকায়, মৃগেল ২৫০-৩৫০, পাঙাশ ১৯০-২২০, ইলিশ প্রতি কেজি (আকার ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৬০০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০-১০০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪০০, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায় এবং তেলাপিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১৩০০ থেকে ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।