ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ঝিনাইদহে একই হাটে পাইকারি বাজারের জন্য সবজি কেনার পর খুচরা বাজারে তা ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রয় হয়। রোববার সকালে সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে সবজির পাইকারি বাজার ঘুরে এমনি চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কমে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজি উৎপাদন করতে সার কীটনাশক খরচ অনেক বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রকার ভেদে পাইকারি দামে পটল বিক্রয় হচ্ছে কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি কেজি প্রতি বিক্রয় হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পুইশাক ৯০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, শশা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কচু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ওলকচু ৫০ টাকা, শিম জাত ভেদে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, পেপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পুইশাক ১৫ আটি, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং মুলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কৃষক বিক্রয় করতে পারছে।
এইক বাজারে কৃষকের থেকে এসব সবজি কেনার পর খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে পটল ৬০ টাকা, ফুলকপি ৯০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, পুইশাক মেচড়ী ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, বেগুন ১৩০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, শশা ৬০ টাকা, কচু ৫০ টাকা, ওলকচু ৬০ টাকা, শিম ১৮০ টাকা, পেঁপেঁ ৩০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা ও পুই শাক আটি ২০ টাকা দরে বিক্রয় করতে দেখা গেছে।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঝিনাইদহের এই বাজার থেকে সবজি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিশনে বা কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা লাভ করেন বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ী মো. আশরাফ মিয়া বলেন, চাহিদার চেয়ে বাজারে সবজি কম। যার কারণে বেশি দাম দিয়ে কৃষকদের থেকে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। আবার ঝিনাইদহ থেকে সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিতে গেলে গাড়ির খরচ পড়ে যায় অনেক বেশি, সে কারণে লোকাল বাজারের থেকে অন্যসব বাজারে সবজির দাম বেশি।
ব্যবসায়ী মো. আক্তার হোসেন বলেন, তিনি চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ, দশমাইল ও ঝিনাইদহ জেলার ডাকবাংলা বাজারে কৃষকদের থেকে পাইকারি পটল, কচু, লাউ, ফুলকপি, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্রয় করে থাকেন। সেগুলোকে ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দিয়ে থাকেন। পাইকারি বাজার থেকে যে সবজি কৃষকের থেকে ক্রয় করেন, সেই সব সবজিগুলো তিনি আড়তে বিক্রি করেন। সেখান থেকে তাদের কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা করে লাভ করেন, এর মধ্যে আবার খরচের বিষয় থাকে। আড়তে বিক্রয়ের পর সেই সবজিগুলো খুচরা বাজারে বিক্রয়ের জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। এতে ওই আড়ৎদারও লাভ করেন। এভাবে ভোক্তা পর্যায়ে এই সবজি তিন থেকে চার হাত বদলে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে। এ কারণে কৃষকের দামের তুলনায় ভোক্তা বাজারে সবজির দামটা বেশি।
ডাকবাংলা বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী রবিউল বলেন, তারা সরাসরি বাজারে কৃষদের থেকে সবজি ক্রয় করেন এবং একই বাজারে বিক্রয় করেন। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি প্রথমে ১৫-২০ টাকা লাভ করেন। তবে কোনো ভোক্তা সবজি ক্রয় করতে এলে তিনি সবজি বেছে বেছে ক্রয় করেন। কিন্তু তারা কৃষকদের থেকে ঝাপি বা বস্তা ধরেই ক্রয় করে আনেন। সবজিগুলো বিক্রয়ের একপর্যায়ে দেখা যায় শেষের সবজিগুলোর মান কমে যাওয়ায় কম দামে বিক্রয় করতে হয়। তবে এভারেজ ৫-১০ টাকা করে কেজিতে লাভ করেন তারা।
খুচরা ব্যবসায়ী বাবলু জানান, বাজার থেকে বেশি দামে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। তারা কেজি প্রতি সবজি ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ করে থাকে। তবে প্রথমে ক্রেতারা বেছে বেছে সবজি কেনার পর শেষে গিয়ে আর প্রথম যে দামে বিক্রয় করা হয় সেই দাম থাকে না। তখন আবার আসল দামে সবজি বিক্রয় করতে হয়।
বেড়াদী গ্রামের কৃষক শরিফুল বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে সব সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবার সবজি লাগানোর জন্য চারা দেব সেই সময়টুকুও পাওয়া যাচ্ছে না আবার বৃষ্টি হচ্ছে। তবে যতটুকু সবজি আছে সেগুলোকে ভালো ভাবে পরিচর্যা করার কারণে অল্প কিছু সবজি বাজারে বিক্রয় করতে পারছি। আবহাওয়া ভালো হলে নতুন করে সবজির চাষ করতে হবে। তখন নতুন সবজি বাজারে ওঠার পর হয়তো সবজির দাম কমতে পারে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ-নবি বলেন, এ বছর সদর উপজেলাতে ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। সবজির মধ্যে মুলা, পালং শাক, লাল শাক, লাউ, শিম, করলা, পুই শাকসহ বিভিন্ন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এসব সবজির ক্ষেত বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার আগাম সবজি চাষে সার ও কীটনাশক খরচও অনেক বেশি। যার কারণে সবজির বাজার একটু বেশি। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে হয়তো সবজির দাম স্বাভাবিক হবে।