পেঁয়াজে সয়লাব বাজারে দামের কোনো হের ফের নেই

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজে সয়লাব, তবুও দামের কোন হের ফের না হওয়াতে কারসাজি দেখছে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

শনিবার সকালে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজে ঠাসা সবকটি আড়ত। গুদামের বাইরেও বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজের স্তূপ।

আড়তদাররা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এলেও দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। দেশি পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ কম বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে মানভেদে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায়। তবে এ দাম পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। কোরবানি ঈদকে ঘিরে হয়তো বাড়তে পারে আবার আরও কমেও যেতে পারে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা পাইকারি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৩ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায়।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের শেষের দিক থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর থেকেই দাম ওঠানামা করেছে। মাঝে মধ্যে চোরাইপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলেও দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। এখন বৈধপথে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এলেও দাম কমেনি। ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে দেশির দাম কম। তাই দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। তবে কোরবানির ঈদে পেঁয়াজের বাজার পরিবর্তন হতে পারে। হয় তো এখনের চেয়ে দাম কমে যাবে, না হয় আরো বেশি বাড়বে।

মেসার্স মহিন ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকার মোহাম্মদ মিজান বলেন, ‘পেঁয়াজের বেচা বিক্রি কম। ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজের দাম কম। তাই দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি।’

তিনি বলেন, ‘শনিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৩ থেকে ৬৫ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি করছি। ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এলেও দেশি পেঁয়াজের দাম কমেনি। তবে কোরবানি ঈদে হয়তো দামের একটু নড়াচড়া হতে পারে। পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে হয়তো দাম বাড়বে না হয় কমে যাবে।’

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ এতদিন বাজারে ছিল না। যা ছিল তা চোরাইপথে আসা। এখন ভারত সরকার রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার পর এখন আমাদের দেশের বাজারে পেঁয়াজ আসছে। তবে এখন বৈধপথে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এলেও দেশি পেঁয়াজের দাম তেমন একটা কমেনি।’

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে মাত্র দুই টাকা কমেছে। বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ মান ভেদে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ছিল। শনিবার সেই পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’

কোরবানি ঈদকে ঘিরে পেঁয়াজের দাম কেমন হতে পারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘সেটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে দাম বাড়বে না কি কমবে।’

এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ মাসের শুরু থেকে পেঁয়াজের দাম যেমন ছিল, এখনও তেমন রয়ে গেছে। বর্তমানে খুচরায় দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’

ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘পেঁয়াজের যখন সরবরাহ কমে যায়, তখন দাম বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু যখন সরবরাহ বাড়ে; তখন দাম কমানোর চিন্তা তাদের থাকে না। এখন সরবরাহ বাড়ার পরও দাম কমেনি। এটা হলো তাদের যে কারসাজি, সেটারই প্রমাণ। আর ব্যবসায়ীরা যে ইচ্ছে করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে, এটাই একটা বড় উদাহরণ।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য সময় যখন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে ভারত সরকার। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এখানে দাম বেড়ে যায়। এখন তো সরবরাহ বেড়েছে। এরপরও দাম কমবে না কেন?’