ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাজারে এক ডজন (১২ পিস) ডিম কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৬০ টাকা। যা রোজার ঈদের আগেও ১২০ টাকা ছিল। আর বাড়তি দামে পণ্যটি কিনতে নাজেহাল হচ্ছেন ভোক্তা।
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুচরা বাজারে ফার্মের বাদামি ডিম প্রতি ডজন ১৬০-১৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক হালি ডিমের দাম নেওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। মাস দুয়েক আগেও এক ডজন ডিম ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ফার্মের সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা। যা আগে ১১০-১২০ টাকা ছিল। সে ক্ষেত্রে ডজনপ্রতি বাদামি ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে ২৫-৩৫ টাকা।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ও কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান ডিমের দাম নির্ধারণ করে। হঠাৎ করে তারা দাম কমিয়ে দিয়ে খামারিদের থেকে ডিম নিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করে। এরপর সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে মুনাফা করে।
সূত্র জানায়, তেজগাঁও ডিমের আড়তে প্রতিদিন ১৫-২০ লাখ ডিম বিক্রি হলেও তারা সারাদেশে চার কোটি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন তারা সারাদেশের বিক্রেতা এবং খামারিদের বাজারদর এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, এপ্রিল মাসে দাবদাহে প্রায় এক লাখ মুরগি মারা গেছে। এর আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। গেল তাপদাহের গরমে লাখ লাখ মুরগি মারা গেছে। ডিম উৎপাদন ২৫-৩০ শতাংশ কম হয়েছে। তাই চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তাছাড়া কিছু মধ্যস্বত্বভোগীও ডিমের দাম বাড়াচ্ছে। কোনো আড়তদার ডিমের দাম বাড়াতে পারে না। চাহিদা থাকলে বাজারে দাম বাড়ে।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ডিমের বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। গতবার দাম বাড়ালে তদারকি সংস্থা তাদের ডেকেছে, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এবারও তারাই ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। সিন্ডিকেটের মধ্যে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ও করপোরেট কয়েকটা প্রতিষ্ঠান জড়িত। তারা চাইলে দাম বাড়িয়ে দেয়। আবার তারা তাদের ইচ্ছাতেই দাম কমে। প্রান্তিক খামারিরাও সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়।
এ বিষয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস চেয়ারম্যান এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আগে যারা ডিম মজুদ করেছে, এ ধরনের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেছে, সেগুলো প্রমাণিতও হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেহেতু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সে কারণে তাদের অপরাধ করার প্রবণতা আরও বেশি বাড়ছে। আর সরকারের যে পরিমাণ তদারকি দরকার বাজারে। সেটা তো এখন নেই বললেই চলে। এই সুযোগ নিচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট। তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্রের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ত্রুটিপূর্ণ বিপণন ব্যবস্থার কারণে মুরগি ও ডিমের দাম অনেক সময় হঠাৎ করে বেড়ে যায়। হাত বদলের কারণে এটা বেশি ঘটে। বিভিন্ন ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। বাজারে ডিমের সরবরাহ ঠিক রাখতে অভিযান চলমান আছে।