ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: গত এক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যগুলোর দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বছরের শেষ ভাগে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়া এবং মানুষের মৌসুমি খাদ্যাভ্যাসের কারণে মসলার চাহিদা কিছুটা বাড়ে। ফলে বেশির ভাগ সময় এ বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়। এখন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে ডলারের চড়া দাম আরও বড় প্রভাব ফেলেছে।
রাজধানীর পাইকারি মসলার বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগেও কেজিপ্রতি এলাচ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। এখন একই মানের এলাচের দাম উঠেছে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। গোল মরিচের দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকায়, লবঙ্গের দাম ১০-২০ টাকা বেড়ে এক হাজার ৫০০ টাকায়, দারুচিনির (সাধারণ) দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে ৩৮৫ টাকায়, স্টিক দারুচিনির দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে ৪১০ টাকায়, জয়ফলের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে ৬৭০ টাকায় ও মিষ্টি জিরার দাম কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়ে উঠেছে ২৭০ টাকায়।
এছাড়া, প্রতি কেজি দেশি শুকনা মরিচের দাম ১০-২০ টাকা বেড়ে ২৯০, ভারতীয় শুকনা মরিচ ১৫-২০ টাকা বেড়ে ২৮০, ভারতীয় হলুদের দাম ২০-২৫ টাকা বেড়ে ২০০, দেশি হলুদের দাম একই পরিমাণ বেড়ে ২০০, কালিজিরার দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে ২৪০, মেথির দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে ১২৫, ধনিয়ার দাম ২০-২৫ টাকা বেড়ে ১৮৫, রাঁধুনির দাম ৫০-৬০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে খুচরা বাজারে পাইকারি থেকে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ব্যবধানে মসলা বিক্রি হচ্ছে। পাড়া মহল্লার দোকানে সামান্য পরিমাণে মসলা কিনলে দামের পার্থক্য আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এদিকে, অধিকাংশ মসলাপণ্যের দাম বাড়লেও বর্তমানে জিরা, জয়ত্রি ও তেজপাতার দাম কিছুটা নিম্নমুখী দেখা গেছে। কয়েক মাস ধরে এ তিন মসলার দাম টানা বাড়লেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। বুধবার বাজারে কেজিপ্রতি জিরার দাম ৪০-৫০ টাকা কমে ৯৮০, জয়ত্রির দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা কমে দুই হাজার ৪৫০ ও তেজপাতার দাম ২০-৩০ টাকা কমে কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশে ব্যবহৃত মসলার মধ্যে জিরা একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে গত কোরবানির ঈদে প্রতি কেজি জিরা ৪০০ থেকে বেড়ে এক হাজার টাকায় ওঠে, যা এখন সামান্য কমেছে।
চকবাজারে বরিশাল স্টোরের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ সময় বিশ্ববাজারে সরবরাহ কমে যায়, ফলে দেশে চাহিদা বাড়ে। এ অবস্থায় দেশে ডলার সংকটের কারণে গত এক বছর ধরে গরম মসলার বাজার অস্থির। ডলার সংকটের কারণে বেশকিছু দিন মসলার এলসি বন্ধ ছিল।’
খুচরা এক মসলা বিক্রেতা বলেন, ‘শীত এলে দেশে ভাজা-পোড়াসহ অন্যান্য মসলাদার খাবারের চাহিদা বাড়ে। এছাড়া বছরের শেষ বলে অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন থাকে। তাই মসলার চাহিদা বেড়ে যায়।’
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসলার বাজারের বৃহৎ অংশই মূলত আমদানিনির্ভর। দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি মসলা আসে ভারত ও চীন থেকে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, গুয়েতেমালা, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মসলা আমদানি করে বাংলাদেশ।
দেশে শুধু ধনিয়া, সামান্য জিরা, মরিচ, হলুদ, তেজপাতা, কালিজিরাসহ হাতেগোনা কয়েকটি মসলা উৎপাদন হয়। তবে চাহিদার তুলনায় সেগুলোর উৎপাদনও অপ্রতুল হওয়ায় এসব পণ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমদানি করতে হয়।