গ্রাহকদের টাকা রিফান্ড করতে ইভ্যালী আট মাস পর্যন্ত দেরি করে, এ সময় প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের টাকা বিকল্প ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছে কী?
ইভ্যালীর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অনেক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পাওয়া পোস্ট-ডেটেড রিফান্ড চেক করে তা বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী, চেক ইস্যু করার তারিখ থেকে ইভ্যালী এক মাস সময় পাবে টাকা পরিশোধের জন্য। অর্থাৎ বিষয়টি এরকম যে ক্রেতা ফেব্রুয়ারিতে অর্ডার দিয়েছিলেন, তিনি সেপ্টেম্বরের আগে রিফান্ড পাবেন না।
এইরকম বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলী রিফান্ডের বদৌলতে ইভ্যালী গ্রাহকদের টাকা আট মাস আটকে রেখে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করতে পারছে। এর বদলে প্রতিষ্ঠানটিকে যদি ব্যাংক লোন নিয়ে কার্যক্রম চালাত হতো, তাহলে তাদেরকে ৭ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হতো।
এভাবেই বর্তমান ইভ্যালীর সম্পদের তুলনায় দেনা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
বিশাল ছাড়ের লোভে ইতোমধ্যে পণ্যের জন্য টাকা পরিশোধ করে দেওয়া অনেক গ্রাহক ভিড় জমাচ্ছেন ইভ্যালীর অফিসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালীর দেনার পরিমাণ ৪০৩.৮০ কোটি টাকা যেখানে কোম্পানিটির চলতি সম্পদ মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা।
বর্তমানে ইভ্যালী অনলাইন ব্যবহারকারীদের গ্রুপে বেশ কয়েকটি বিক্রয় পোস্ট দেখা যায়। এতেই বোঝা যায় টাকা সময়মতো ফেরত পাবে নাকি তা নিয়ে সন্দিহান অনেক গ্রাহক।
আরও পড়ুন: ইভ্যালীর টি১০; ন্যাড়াদের বেলতলায় নেবার নতুন ফাদ? – VoktaKantho.com
ইভ্যালীতে আটকে থাকা অর্ডার নিয়ে গ্রাহকরা ভীষণ চিন্তিত। কেউ কেউ অবশ্য আশা করছেন, প্রতিষ্ঠানটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
ইভ্যালীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল অবশ্য স্বীকার করেননি যে, তাদের গ্রাহকরা আতঙ্কে আছেন।
‘এরকম গ্রাহক খুবই কম। বেশিরভাগ গ্রাহকই তাদের অর্ডার নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। আর বিশ্বস্ত গ্রাহকরা আমাদের ব্রেক-ইভেন গোলকে সমর্থন দেবার জন্য আমাদের রেগুলার শপে অর্ডার করছেন।’
ইভ্যালীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল
প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের টাকা রিফান্ড করছে কেন জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘বেশিরভাগ অর্ডারই সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। মহামারির কারণে সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমাদের স্টকে ঘাটতি পড়ে। সে কারণে অল্পকিছু অর্ডার সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারিনি। এজন্য ওইসব অর্ডারের টাকা ফেরত দিচ্ছি।’
তাহলে, ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে যে পণ্য পৌঁছানোর কথা, সেটি পৌঁছাতে ৬ মাস পর্যন্ত দেরি হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে রাসেল বলেন, ‘যেসব গ্রাহক প্রকৃত রিফান্ড অ্যামাউন্ট গ্রহণ করেননি, আমরা তাদের টাকা এমআরপিতে ফেরত দিচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে ফান্ড এবং মূলধন আনতে হয়। এজন্যই বাড়তি সময় লাগছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে যখন জানা গেল বর্তমান দেনার বিপরীতে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসেবে কার্যত কোনো টাকা নেই, তখনই প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি হওয়ার ঝুঁকির কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রাহকরা। ব্যবসায়ীদের কাছে ইভ্যালীর দেনা ১৯০ কোটি টাকা এবং গ্রাহকদের কাছে দেনা ২২৪ কোটি টাকা।
সরকার যখন ঘোষণা করে যে পণ্য সরবরাহ করার আগ পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা বুঝে পাবে না, তখন ধারণা করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির নগদ প্রবাহের অসামঞ্জস্যতা আরও বাড়বে।
অনলাইনে আগে মূল্য পরিশোধ করা পণ্য সর্বোচ্চ ৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেছেন, ইভ্যালীর ব্যবসায়িক মডেল আদর্শ ব্যবস্থা নয়। এবং গ্রাহকদেরকে পণ্য সরবরাহ করা ও ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করাও তাদেরই দায়িত্ব।
আরও পড়ুন : অভিযোগ তোয়াক্কা করেনা ইভ্যালি – VoktaKantho.com