নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩-এর ৪২ ধারা মতে বিইআরসি আইন লঙ্ঘন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে অপরাধের শাস্তি অর্থদন্ড কিংবা কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ড। সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর প্রস্তাবমতে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যহার আকস্বিকভাবে এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা লিটারপ্রতি ১৫ টাকা করে বৃদ্ধি করে। বিইআরসি আইনের ৩৪(৪) উপধারা মতে পেট্রোলিয়াম পণ্যসহ সকল জ্বালানির মূল্য পক্ষগণের শুনানীর ভিত্তিতে নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’র। বিপিসি বিইআরসি’র লাইসেন্সী। লাইসেন্সী হিসেবে উক্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিপিসিকে উক্ত আইনের ৩৪(৬) ধারা মতে বিইআরসির নিকট পেশ করতে হবে। কিন্তু বিপিসি বিইআরসির পরিবর্তে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পেশ করে এবং জ্বালানি বিভাগ মূল্যবৃদ্ধি করে।
তাতে প্রতিভাত হয়, বিপিসি উক্ত আইনের ৩৪(৬) উপধারা লংঘন করে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ওই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে পেশ করে। জ্বালানি বিভাগ ৩৪(৪) উপধারা লংঘন করে সে প্রস্তাব মতে মূল্যবৃদ্ধি করে। সুতরাং বিইআরসি আইন লঙ্ঘনের অপরাধে বিপিসি এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং উক্ত মূল্যবৃদ্ধির আদেশ পূণর্বিবেচনা করা জরুরি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আইনের ৪৭ ধারা মতে বিইআরসি’র।
উক্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে প্রেরণ এবং জ্বালানি বিভাগ কর্তৃক সে-মূল্যবৃদ্ধি করা বিইআরসি আইনের পরিপন্থী। এই বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হলে এলপিজির মতো ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানো হতো। কিন্তু বাস্তবে বিপিসি এবং জ্বালানি বিভাগ বিষয়টি উপস্থাপনে বিরত থেকে স্বীয় বিবেচনায় মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি বিপন্ন এবং ভোক্তাদের কাছে সরকার এখন অপ্রিয়। এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিইআরসি আইনের ৩৪(৩) উপ-ধারা মতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত মূল্যহারসমূহ বিইআরসি নির্ধারণ করবে এবং সে-মূল্যহার জ্বালানীর সরবরাহ ব্যয় তথা লাইসেন্সীর রাজস্ব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বিগত ৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে জ্বালানী বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত লুণ্ঠনমূলক মূল্যহার বহাল রেখে বিপিসি রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত ৪৩,৭৩৪.৭৮ কোটি ভোক্তাদের নিকট থেকে আদায় করেছে।
অতএব এ-পরিস্থিতিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে বিইআরসি, জ্বালানি সম্পদ বিভাগ, এবং বিপিসির নিকট নিম্নরূপ প্রস্তাব করা হয়েছে:
১.সূত্রোক্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল/প্রত্যাহার/স্থগিত করে মূল্যহার বৃদ্ধিব প্রস্তাবটি বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারা মতে বিইআরসি কর্তৃক নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিইআরসিতে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
২.অন্যথায় উক্ত প্রজ্ঞাপন মতে ডিজেল ও কেরোসিনের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য বিইআরসিকে অনুরোধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আইনী বিধান মতে মূল্যবৃদ্ধিতে কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে মূল্যবৃদ্ধির আদেশ পুনর্বিবেচনা করার বিধান রয়েছে। উক্ত মূল্যবৃদ্ধি এবং তা পূণর্বিবেচনার এখতিয়ার বিইআরসি।
৩.বিপিসি রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত ৪৩,৭৩৪.৭৮ কোটি টাকা ভোক্তাদের নিকট থেকে অবৈধভাবে আদায় করেছে। জ্বালানীর মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভর্তুকি প্রদানের লক্ষ্যে এ-অর্থ দিয়ে এনার্জি প্রাইচ স্ট্যাবিলাইজড ফান্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমনটি ভোক্তাদের টাকায় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্ত তহবিল এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল গঠিত হয়েছে।
আরইউ