যেই সময়টাতে শ্রমিক এর মুক্তির বার্তা নিয়ে মে দিবস সমাগত, তখন বাংলাদেশে লাখ লাখ শ্রমিক ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। দেশীয় রীতিতে আনুষ্ঠানিক কর্মঘন্টায় পারিশ্রমিক থাকলেও এর বাইরের যে শ্রম আদায় করে নেয়া হচ্ছে তার দিকে পারিশ্রমিক শুন্যের কোটায়। মালিকদের মাঝে নেই শ্রম আইনের তোয়াক্কা । তাই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত আজ দেশের অবকাঠামে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখা এই শ্রমিক গোষ্ঠী। পরিশ্রমি এই দেশ কারিগর দের মুক্তি কামনাই যেন এখন সবচেয়ে অবহেলিত বিষয়।
হাজারো শ্রমিকের ঘামে আজকের বাংলাদেশ। জীবন বাজি রাখা এই মানুষগুলোর অধিকার বঞ্চনার গল্পেরও শেষ নেই।
আছে শুধু পেটের দায়ে সারাদিন পরিশ্রমের আহাজারি।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু, বাস্তব চিত্র কেমন?
দেখতে গেলেই গায়ে শিহরণ জাগে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার নেই বালাই, আছে শুধু অল্প পারিশ্রমিকে অমানুষিক পরিশ্রম।
মুনাফা এবং মজুরির যে বিরোধ- সেই বিরোধে শ্রমিক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও দুর্বল এবং শোষিত। ফলে সারাদুনিয়াতে খাদ্য-পণ্য ও ব্যবহারিক পণ্য উৎপাদন সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেললেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যায়। আয়ের বড় অংশ খাদ্য, বাড়িভাড়া, পোশাক, চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে যাওয়ার ফলে সঞ্চয় যেমন থাকছে না তেমনি দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি খরচ করাও শ্রমিকের জন্য সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাহলে ডিজিটাল দক্ষতা শ্রমিকরা অর্জন করবে কিভাবে? চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কি তাহলে বেকারত্বের ভয়াবহতা নিয়ে আবির্ভূত হবে? উৎপাদন এবং বেকারত্ব বৃদ্ধির এই দুষ্টচক্র সামাজিক সব শৃঙ্খলাকেই ভেঙ্গে ফেলবে। উৎপাদন বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা এবং আগ্রাসী পুঁজিবাদের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে কর্মদিবস ও ন্যায্য মজুরির কোনো বিকল্প নেই। ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে অগাস্ট স্পাইস যে উক্তি করেছিলেন– The time will come when our silence will be more powerful than the voices you strangled today.
বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের পটভূমিতে মে দিবস বার বার সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকের অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যুও নতুন কিছু নয়। সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির জরিপ বলছে, ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্ঘটনা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। আর এসব ঘটনায় মারা গেছেন চার হাজারের বেশি শ্রমিক। যার বেশিরভাগের জন্যই দায়ী, কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা।
শ্রমিক নেতা ও অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলোর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকের জীবন বীমা চালুসহ নানা দাবি থাকলেও অনেক সময়ই মালিকপক্ষ এসব আমলে নেয় না। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।
সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক মে দিবসে এই প্রত্যাশা।